বর্ণাঢ্য আয়োজনে শতবর্ষ উদযাপন, সেজেছে ঢাবি ক্যাম্পাস
৩০ নভেম্বর ২০২১ ২১:৫৮
এ বছরের পহেলা জুলাইয়েই শতবর্ষ পূরণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ওই সময় জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই উপলক্ষ উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তীও সামনে ছিল। যে কারণে ঢাবি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যৌথভাবে শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন যৌথভাবে উদযাপন করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই আগামীকাল বুধবার (১ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে ঢাবির শতবর্ষপূর্তির আয়োজন।
শতবর্ষের এই আয়োজন ঘিরে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক বটতলাসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এই অনুষ্ঠান ঘিরে নানা আয়োজনের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে কেবল সাজসজ্জা আর আয়োজন নয়, মৌলিক গবেষণা ছাড়াও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকেও জোর দিচ্ছে দেশের একমাত্র শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়টি।
এ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসডিজি তথা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো বাস্তবায়ন করে চলেছে।’
এদিকে, শতবর্ষ উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে থাকছে নানা আয়োজন। এ ছাড়া ১২ ডিসেম্বর রাখা হয়েছে বর্ণাঢ্য কনসার্ট।
প্রথম দিন (১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের এসব আয়োজনের উদ্বোধন হবে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই লোটে শেরিং ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বই, ফটোগ্রাফি অ্যালবাম ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ওই দিন বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আলোচনা সভা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় খ্যাতিমান শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আয়োজনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিনেও (২ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
এসব আলোচনা সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও অ্যালামনাইরা অংশগ্রহণ করবেন।
রেজিস্ট্রেশন করা সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া সব শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা রাখবে কর্তৃপক্ষ।
মৌলিক গবেষণায় জোর
শতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাবি কতৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৫৫টির বেশি মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সেন্টার, বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট এসব গবেষণা পরিচালনা করছে।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মৌলিক গবেষণায় জোর দেওয়ার লক্ষ্যে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একটি সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এগুলো তৈরি হয়ে যাবে।’
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট তাদের নিজ নিজ অ্যাকাডেমিক ডিসিপ্লিনকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের অর্জন ও প্রত্যাশা নিয়ে ৫০টিরও বেশি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করবে।
শতবর্ষকে ঘিরে উপলক্ষে যত প্রকাশনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন গ্রন্থ ও সংকলন প্রকাশ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে রয়েছে— ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১-২০২১): ক্রমবিকাশ’ ও ‘The University of Dhaka and the Making and Shaping of Bangladesh’ শীর্ষক গ্রন্থ। আরও রয়েছে ‘শতবর্ষের আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক স্মারক সংকলন, সমাবর্তন বক্তা ও উপাচার্যদের বক্তব্য নিয়ে একটি সংকলন গ্রন্থ, শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘ফটো অ্যালবাম’। এছাড়া ‘শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অর্জন ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রবন্ধ নিয়ে প্রবন্ধ সংকলন, কবিতা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত কবিতা নিয়ে ‘কবিতা সংকলন’ প্রকাশের কথাও জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য।
দৃষ্টিনন্দন সেন্টিনারি মনুমেন্ট
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়— শতবর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ‘শতবার্ষিক স্মৃতিস্তম্ভ’ (Centenary Monument) স্থাপন করা হবে। এর মটো হবে— ‘Monument of Infinity Reflecting Vastness, Inclusiveness and Magnanimity’ (বিশালতা, অন্তর্ভুক্তি ও উদারতার প্রতিফলনে অসীমতার স্তম্ভ)।‘
‘আইটি হাব’ স্থাপন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বাংলাদেশ গড়তে গবেষণা উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আইটি হাব তৈরি করা হবে। এটি হবে শিক্ষাখাতে বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির (Green Technology) তৈরি প্রথম ভবন।
উপাচার্য বলেন, আইটি হাবের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে, সর্বোপরি দেশের ও সময়ের প্রয়োজনে দক্ষ তথ্য প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা যাবে।
শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় অটোমেশন
শতবর্ষকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ পরিচালিত DU-AIS Project-এর মাধ্যমে অটোমেশনের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তাদের বেতন ও যাবতীয় ফি জমা দিতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, পেনশন, ইনকাম ট্যাক্স, ইনস্যুরেন্স, ব্যাংক লোন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেনিভোলেন্ট ফান্ড, শিক্ষকদের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিল, বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ডের হিসাবসহ সব আর্থিক লেনদেন এই অটোমেশনের ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হবে।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর