Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ বছরেই তারামন বিবিকে ভুলে গেছে রাষ্ট্র

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪৮

কুড়িগ্রাম: মৃত্যুর মাত্র তিন বছরের মাথায়ই তাকে ভুলতে বসেছে রাষ্ট্র। অথচ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে যে দু’জন নারী বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন, তিনি তাদের একজন। তিনি বীরপ্রতীক তারামন বিবি। আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) তার তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু মহান এই মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজন। প্রশাসনের ওপর অভিমান করে নিজ বাড়িতে স্বল্প পরিসরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে তার পরিবার।

২০১৮ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলা বা রাজিবপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আয়োজনই নেই এই দিনটিকে ঘিরে।

তারামন বিবির ভাই জানান, গত বছর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাদের বাড়িতে তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী ও স্মরণ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তাদের কেউ উপস্থিত হননি তাদের বাড়িতে। অর্থ সংকটের কারণে এবারে বড় কোনো আয়োজনের ব্যবস্থাও করতে পারেননি।

তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার তার গ্রামের বাড়ী রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাদ মাগরিব পারিবারিকভাবে ও বাদ আছর কুড়িগ্রামের আরাজী পলাশবাড়ী এলাকার গুচ্ছ পাড়ার বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে আবু তাহের ও বীরপ্রতীক তারামন বিবির ভাই হাসান মিয়া।

তারামন বিবির ভাই হাসান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘গত বছরের এই দিনে বোনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সে সময়ের জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মহোদয়কে বাড়িতে দাওয়াত করেছিলাম। কিন্তু উনারা আসেননি। এতে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। তাই এবার আর আগের মতো করে আয়োজনও করব না। তাছাড়া আমি নিজেই অত্যন্ত গরীব মানুষ। সেরকম কোনো আয়োজনের সামর্থ্যও নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত চক্রবর্তী জানান, বীরপ্রতীক তারামন বিবির তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা পাননি। তবে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে বাদ জোহর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন বলে জানিয়েছেন।

সরকারি বা রাষ্ট্রীয়ভাবেই নয়, তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকীতে স্থানীয় কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকেও কোনো আয়োজন নেই। রাজিবপুরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হাই সরকার বলেন, বীরপ্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

বীর প্রতীক তারামন বিবির ছেলে আবু তাহের বলেন, বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাত্র দু’জন নারীর মধ্যে একজন হচ্ছেন আমার মা তারামন বিবি। তার মৃত্যুতে বাড়িতে ছোট করে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করেছি। কিন্তু প্রশাসন কিংবা কোনো সংগঠন কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে আমরা কিছু জানি না।

তারামন বিবি ছিলেন রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সোবহানের সাত ছেলেমেয়ের তৃতীয় সন্তান। জন্ম ১৯৫৭ সালে। লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরে নিজ গ্রামে ছিলেন। ওই সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে যান। তখন তারামনের বয়স ছিল ১৩/১৪ বছর। পরে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।

এরপর একদিন দুপুরে খাওয়ার সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। এ কারণে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও সে কথা তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর জানতে পারেননি। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান আলী ও রাজিবপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকীর সহায়তায় তাকে খুঁজে বের করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে বীরপ্রতীক খেতাবের পদক তুলে দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

তারামন বিবি তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বীরপ্রতীক তারামন বিবি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর