রেমিট্যান্সে পতন অব্যাহত, নভেম্বরে দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
১ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৫৫
ঢাকা: ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই এর প্রবাহ আগের তুলনায় কমছিল। সদ্য বিদায়ী নভেম্বরেও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে প্রবাসীরা ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে। গত দেড় বছরের মধ্যে এটি মাসের হিসাবে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে দেশে ১৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর বছরখানেক ধারাবাহিকভাবেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। এর মধ্যে রেমিট্যান্স আগের সব রেকর্ডও ছাড়িয়েছে। তবে এই এক বছর পর থেকে ফের কমতে শুরু করেছে রেমিট্যান্স। গত বছরের মে মাসের পর আর এক মাসে এত কম রেমিট্যান্স দেশে আসেনি।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এতদিন মূলত তিনটি কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছিল। প্রথমত, অনেক প্রবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়েছিলেন বা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ছিলেন। ফলে তারা সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত, সরকার ২ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রণোদনা ঘোষণা করায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়েছিল। তৃতীয়ত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রবাস থেকে দেশে আসা মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। ফলে যারা হাতে হাতে টাকা পাঠাত, এখন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছিলেন। এসব কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহের উর্ধ্বগতি ছিল লক্ষণীয়।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রভাব নিয়ে ড. মির্জ্জা আজিজ বলেন, সবশেষ পাঁচ মাসে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এটি অনেকটাই বাস্তবসম্মত। তারপরও এটি অর্থনীতির জন্য কিছুটা চিন্তার বিষয়। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বেড়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি নভেম্বর মাসসহ টানা পাঁচ মাস ধরে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সবশেষ নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি আগের অক্টোবর মাসের তুলনায় ৯ কোটি ২১ লাখ ডলার কম। ওই মাসে প্রবাসীরা ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি মার্কিন ডলার ও চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে) ৭৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৯২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স কম এসেছে ২২৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা প্রায় ২১ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো— সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর