ভার্চুয়াল কোর্টেই বিচার ব্যবস্থার মুক্তি দেখছেন প্রধান বিচারপতি
১ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:২২
ঢাকা: মামলাজটসহ বিচার ব্যবস্থার গতিশীলতায় ভার্চুয়াল কোর্টকেই মুক্তির উপায় বলে মনে করছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
মামলাজট নিরসনে ভার্চুয়াল কোর্টের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার উত্তরসূরী হিসেবে যিনি আসবেন তাকে বলব, ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থাকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটাকে অনেক সামনে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের মুক্তি হলো ভার্চুয়াল কোর্টে।
বুধবার (১ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ডিজিটাল আর্কাইভিং ও ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, একমাত্র ভার্চুয়াল কোর্ট যদি প্রবর্তন করা যায় তাহলে বিচারকরা বাসায় থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন। আইনজীবীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাহলে অচিরেই আমরা মামলার জট থেকে মুক্তি পাব। তাছাড়া মামলাজট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা হলে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাবে। ভারতে ২৪ ঘণ্টা ফাইল করা যাচ্ছে। আমার যে উত্তরসূরী আসবে, তিনি এটা করতে পারলে বিচার বিভাগে বিপ্লব ঘটে যাবে।
‘শুধু তাই নয়, এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যে জায়গায় যাচ্ছে, শুধু মুখে কথা বলবেন লেখা হয়ে যাবে। কষ্ট অনেক কমে যাবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এমন জায়গায় যাবে যে জুডিশিয়ারিতে কোনো পেন্ডিং মামলা থাকবে না। কিন্তু এ প্রযুক্তির সৎ ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার পরে যারা আমার উত্তরসূরী আসবেন, আমি আশা করি তারা এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন,’— বলেন প্রধান বিচারপতি।
দেশে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রবর্তনের সময়ের স্মৃতিচারণ করে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমার এখনও খেয়াল আছে— ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বললাম, কোর্ট তো ফাংশন করছে না। সারা পৃথিবীতে কোর্ট চলছে, বাংলাদেশে শুধু চলছে না। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, ভার্চুয়াল কোর্ট করেন। পরে ভার্চুয়াল কোর্টের আইন আমরা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে করেছি। এজন্য আমি আইনমন্ত্রী, বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ দেবো। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কাছে আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। কারণ বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, জেলখানা আমার পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু একটা করেন। পরে এক লাখ লোকের জামিন হয়েছে ভার্চুয়াল কোর্ট থেকে।
ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত যেসব সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। জানান, ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় যা কিছু প্রয়োজন, তিনি চাওয়ামাত্রই সেগুলোর ব্যবস্থা করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কেবল সুপ্রিম কোর্টের কাজ করার জন্য ২২০ কোটি টাকা দিয়েছেন। মাত্র এক লাভ ডলার দিয়ে ভার্চুয়াল কোর্টের কাজ শুরু করা হয়েছে। এখানকার সবকিছু আর্কাইভিং করতে ডেটা সেন্টারও করা হবে, যার জন্য ১৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি তার আইসিটি উপদেষ্টাকেও ভার্চুয়াল কোর্ট উদ্যোগ বাস্তবায়নে সমর্থন দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধান বিচারপতি। ভার্চুয়াল কোর্টের উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিরলস সহযোগিতা করে যাওয়ায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। সে প্রসঙ্গ মাথায় রেখেই ভার্চুয়াল কোর্ট সচল রাখা এবং বিচার বিভাগকে গতিশীল করার আরও সব উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য উত্তরসূরীদের প্রতি আহ্বান তিনি।
ডিজিটাল আর্কাইভিং ও ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর, এটুআই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারোয়ারসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর
আর্কাইভিং ই-ফাইলিং ব্যবস্থাপনা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন