সশস্ত্র বাহিনীকে রূপকল্প ২০৪১-এর অগ্রসেনা হিসেবে কাজ করার আহ্বান
২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৫৯
ঢাকা: সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রূপকল্প ২০৪১ তথা সরকারের হাতে নেওয়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রসেনা হিসেবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলব।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২১’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২১’-এর গ্র্যাজুয়েশন সিরিমনিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্স, ডিএসসিএসসি, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। পরে দুপুর ১২টায় এনডিসি ও ডিএসসিএসসি’র পরিচালনা পর্ষদের ১৮তম যৌথ সভায় অংশ নেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা একটি পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালেই কুমিল্লা সেনানিবাসে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি গড়ে তোলেন। তিনি কম্বাইন্ড আর্মস স্কুল ও সেনাবাহিনীর প্রতিটি কোরের জন্য স্বতন্ত্র ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভারত ও যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে জাতির জনকের অন্যান্য উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে, আমরা বিশ্বাস করি দুনিয়ার শান্তিতে। আমরা চাই, দুনিয়ার সম্পদশালী দেশগুলো যুদ্ধের জন্য অর্থ ব্যয় না করে মানুষের জন্য অর্থ ব্যয় করুক। তাহলে দুনিয়ায় গরিব মানুষ থাকবে না। আমরা এমনি আদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তির এ দেশীয় দোসররা আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতাকে ম্লান করে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেয়।
জাতির পিতাকে হত্যার ২১ বছর পর সরকার গঠন করে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’— জাতির পিতার এই মূলমন্ত্রকে পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে মেনে চলছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জাম, আকাশে বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক অয়েরলিকন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছি। নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও মেরিটাইম হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে ‘সোয়াড্স’ গঠন করেছি। নতুন নতুন নৌ এবং সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের সদা প্রস্তুত থাকে। তারা বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কোয়ারানটাইন সেন্টার ও হাসপাতাল স্থাপন, আটকে পড়া দেশি-বিদেশি লোকজনকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা, গুরুতর রোগী এবং চিকিৎসা-স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিতকরণে দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকাকেও প্রসংশিত করেছে। আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি। আর্থসামাজিক সব সূচকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি।
করোনা মহামারির সময়েও মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করেছি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। আমরা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছি। ‘মুজিব শতবর্ষ’ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এটুকুই বলব— আমরা ২০৪১-এর প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। তার জন্য অগ্রসেনা হিসেবে আপনারা কাজ করে যাবেন— এটিই আমরা প্রত্যাশা করি। আর ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তি হবে। সেটিও আমাদের মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলব।
এবারে এনডিসি-তে ২৭ জন বিদেশি সামরিক সদস্যসহ মোট ৮৮ জন এবং এএফডব্লিউসি-তে মোট ৫৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা