‘শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়াতেই পাহাড়ে হানাহানি’
২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৩৭
রাঙ্গামাটি: ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির (শান্তি চুক্তি) পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়াতে পাহাড়ে হানাহানি বাড়ছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, বলে মন্তব্য করেছেন জনসংহতি সমিতির নেতারা। অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারা সরকার বাস্তবায়ন করেছে; বাকি ধারাসমূহ বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক দু’টি অনুষ্ঠানে এসব মন্তব্য করেন জনসংহতি সমিতি ও সরকারি দলের নেতারা।
এদিন সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থবিরোধী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ; জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে’ জুম্ম ছাত্র-যুবদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় ডা. গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা।
এতে আরও অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মেঞচিং মারমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি ভবতোষ দেওয়ান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুশল চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য সৈকত রঞ্জন চৌধুরী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ম্রানু মারমাসহ অন্যরা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হওয়ায় আমরা ভেবেছিলাম এখানে (পাহাড়ে) হানাহানি কমবে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি পাহাড়ে এখনও অশান্তি বিরাজ করছে। অধিকার বঞ্চিত মানুষের মধ্যে ভয়, আতঙ্ক উদ্বেগ কাজ করে প্রতিনিয়ত।’
জনসংহতি সমিতির নেতারা বলেন, ‘আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪ বছর পূর্তির দিন। জনসংহতি সমিতির হিসেবে এই ২৪ বছরে চুক্তির মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ধারাগুলো পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সরকার বলছে, তারা ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো তারা বছরে দুইটি ধারা বাস্তবায়ন করছেন; আর জনসংহতি সমিতির হিসেবে বছরে একটি। তাহলে তো চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হতে আরও ৪৮টি বছর লাগবে। সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক না বলে জুম্ম জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি রাখতে আপনারা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে অতিসত্ত্বর এগিয়ে আসুন। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির দায় আপনাদেরই (সরকার) নিতে হবে।’
এদিকে, একইদিনে সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে চুক্তির ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। আলোচনা সভায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন- রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালকুদার।
এতে আরও অতিথি ছিলেন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ইফতেকুর রহমান, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেনসহ অন্যরা।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের দুয়ার খুলে গেছে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় দুর্গম পাহাড়েও শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে হানাহানিমুক্ত পার্বত্য অঞ্চল গঠন করা সম্ভব হয়েছে। চুক্তির ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে হয়েছে। বাকি ধারা বাস্তবায়নেও সরকার আন্তরিক।’
এসময় সভার প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘আজ (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় সন্তু লারমার চুক্তি নিয়ে অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে উনি আমন্ত্রণ জানাননি; বিভিন্ন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতদের নিমন্ত্রণ করেছেন। দূতাবাসের মাধ্যমে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব না। অস্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে না। যদি অস্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতো তাহলে শান্তি চুক্তি করতেন না। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করবে আওয়ামী লীগ। আর আপনি (সন্তু লারমা) আওয়ামী লীগকেই নিশ্চিহ্ন করতে চান। আপনারা মানুষ মারবেন, চাঁদাবাজি করবেন আর আমরা বিচার চাইতে পারব না?’
সারাবাংলা/এমও
জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি পাহাড়ে হানাহানি সন্তু লারমা