‘খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানো সরকারের জন্যই দরকার’
২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৩৯
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানো এই সরকারের জন্যই দরকার। কারণ, তার যদি কোনো ক্ষতি হয় দেশের মানুষ সরকারকে রেহাই দেবে না।
বুধবার (২ ডিসেম্বর নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম এ মানববন্ধন আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশনেত্রীকে বাইরে যেতে দিতে চায় না। কেন? একবারও কি চিন্তা করেন না যে, এই দেশের ১৬ কোটি মানুষ রোজা রাখছে, দোয়া করছে- খালেদা জিয়া যেন সুস্থ হয়ে যান। কেন আপনারা (সরকার) ভাবেন না কোটি কোটি মানুষের এই যে অভিশাপ আপনারা নিচ্ছেন, এই অভিশাপ আপনাদের নিঃসন্দেহে অভিশপ্ত করবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের। এই মাসটি হচ্ছে ডিসেম্বর মাস। এ বছরটি হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বছর। অথচ যে মহিয়সী নারী মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তারা স্বামী জিয়াউর রহমানকে সাহস যুগিয়েছিলেন, দু’টি শিশু সন্তানসহ বন্দি হয়েছিলেন এবং ৫০ বছর আগে এই ২ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন তিনি আজও আরেকটি দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকারের কারাগারে বন্দি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধুমাত্র একজন রাজনতীবিদ নন, তিনি সেই মহিয়সী নারী, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কারাবরণ করে এই দেশের নারীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। পরে যখন এই দেশের প্রয়োজন হয়েছে তখন তিনি আবার রাজপথে নেমে এসেছেন গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এখনো গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবার জন্য কারাগারে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে।’
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে গেলে কেউ চিকিৎসা পায় না, তারা অর্থনীতিকে ধবংস করেছে, ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছে। কথায় কথায় বলে উন্নয়নের রোল মডেল নাকি বাংলাদেশ। আমাদের কৃষকেরা ধানের দাম পায় না, পণ্যের দাম পায় না, শ্রমিক ভাইয়েরা তাদের মজুরি পায় না, আমাদের নিম্নবিত্ত আরও নিম্নবিত্ত হচ্ছে। দারিদ্র্যের সীমা আরও অনেক নিচে নেমে গেছে।’
‘অথচ কিছু ভুঁইফোড় মানুষ মোটা তাজা হচ্ছে। জনগণের পকেট কেটে, লুটপাট করে কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছে, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বীর বিক্রম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এবছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত টানা ৫৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। নতুন করে তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার সেই আবেদন আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হলো- সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। বিদেশে যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবেদন করতে হবে।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম