ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে লাল পতাকা টানানো সমাধান নয়: আসক
২ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫৫
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন রূপ বা ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ প্রতিরোধে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাড়িতে লাল পতাকা টানানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভাইরাসের সংক্রমণরোধে এভাবে লাল পতাকা টানানোর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত ও এলাকার জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে লাল পতাকা টানানো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নয়। বরং তা সমাজে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামালের সই করা একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাড়িতে লাল পতাকা টানানোর ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় চারপাশের মানুষকে সতর্ক করতে আফ্রিকা ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনের বৈঠকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, আফ্রিকা ফেরতদের কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, ঘনবসতিপূর্ণ এদেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয় এবং এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত ও এলাকার জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে লাল পতাকা টানানো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নয়। বরং তা সমাজে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়াতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থাটির মতে, লাল পতালা টানানো ব্যক্তির নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা হুমকির মুখে ফেলে। করোনার এ দুঃসময়ে সামাজিক সম্প্রীতি ও সংহতি বজায় রাখাও বাঞ্ছনীয়। আসক প্রত্যাশা করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির জন্য অবমাননাকর কোন উদ্যোগ নেবেন না। আইসোলেশন ও হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করবেন কিন্তু সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে, ২০২০ সালে বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে সবস্থানেই সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বাংলাদেশেও সতর্কতার অংশ হিসেবে আইসোলেশন ও কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেনটাইনে রাখার পাশাপাশি তাদের বাড়িতে লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় দুই বছর পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে সেই ধরনের পদক্ষেপে নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার। আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাড়িতে প্রয়োজন হলে পতাকা টানিয়ে দিতে বলা হবে।
পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আফ্রিকা ফেরত ব্যক্তিদের বাড়িতে লাল পতাকা টানানো হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর দেখে বৃহস্পতিবার প্রতিক্রিয়া জানায় আসক।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম