মাসে খরচ ৭ লাখ, তবু ইন্টারনেট ‘চলে না’ রাবিতে
৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:০০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইন্টারনেট সেবা খাতে প্রতি মাসে খরচ প্রায় সাত লাখ টাকা। সেই হিসাবে ইন্টারনেটের পেছনে রাবি প্রশাসনের খরচ বছরে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে বছরে প্রায় কোটি টাকা খরচ হলেও সে তুলনায় মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেই ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে পড়েছে।
রাবি আইসিটি সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও বাংলাদেশ রিসার্স অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা নিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৫৬ এমবিপিএস গতির এই ইন্টারনেট সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতি মাসে গুনতে হয় ৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠান দু’টিকে প্রতি তিন মাসে এই বিল পরিশোধ করতে হয় রাবি প্রশাসনকে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, লাইব্রেরি ভবন, কেন্দ্রীয় মিলনায়তন, একাডেমিক ভবনসহ আবাসিক হলগুলোতে ওয়াইফাইয়ের অবস্থা শোচনীয়। দুর্বল ফ্রিকোয়েন্সির কারণে ক্যাম্পাসের সব জায়গায় ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে হল ও একাডেমিক ভবনগুলোতে এই সমস্যা প্রকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াই-ফাই সেবা নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ওয়াই-ফাই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হলগুলোতে দক্ষ জনবল নেই। এ অবস্থায় রাবি প্রশাসনের ওয়াই-ফাই দিয়ে তারা ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন না। অথচ শিক্ষা সংক্রান্ত অনেক কাজই এখন অনলাইনকেন্দ্রিক। বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির ব্রডব্যান্ড সংযোগ অথবা মডেমের ওপর নির্ভর করতে হয়।
রাবির ইন্টারনেট সংযোগের অবস্থা তুলে ধরে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানালেন, দিনের বেশিরভাগ সময় ১০০ কেবিপিএস থেকে ১৫০ কেবিপিএস গতি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্টারনেট সংযোগে। এই গতির ইন্টারনেট দিয়ে অনলাইনে শিক্ষামূলক কোনো কনটেন্টই দেখা সম্ভব হয় না। ফলে পড়ালেখা থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করতে সমস্যায় পড়ছেন তারা।
ইন্টারনেট ব্যবস্থার এই বেহাল দশা স্বীকার করে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. বাবুল ইসলাম বলেন, মূলত ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় এবং ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ওয়াই-ফাইয়ের স্পিড কিছুটা কম। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি যেন শিক্ষার্থীরা গুণগত সেবাটা পায়। আবাসিক হলগুলোতে এ বিষয় দক্ষ কোনো জনশক্তি নেই। প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা উদ্যোগ নিলে আইসিটি সেন্টার থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।
এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ তুলে ধরে ড. বাবুল বলেন, প্রকৃতপক্ষে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব না। ব্রাউজিং রুম অথবা ল্যান্ড কানেকশন সিস্টেমের মাধ্যমের এর সমাধান করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের রুমে আলাদা আলাদা ল্যান্ড পয়েন্ট থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ইন্টারনেট সেবা নিতে পারবে— এরকম ব্যবস্থা করতে হবে।
ইন্টারনেট সংযোগকে আরও উন্নত করতে হলগুলোতে ইন্টারনেট টেকনিশিয়ান বাড়ানো বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন এই অধ্যাপক।
সারাবাংলা/টিআর