Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা-সিলেট ৪ লেন সড়ক: ভূমি অধিগ্রহণে পরামর্শক ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপনডেন্ট
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৯

ফাইল ছবি

ঢাকা: ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে দিগুণেরও বেশি বাড়ছে পরামর্শক ব্যয়। এখাতে মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৫৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ৮৩৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা বেড়ে এখন দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩৮২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তবে টাকার সঙ্গে বাড়ছে পরামর্শকের সংখ্যা এবং কার্যপরিধিও। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ৩২৬ জনের পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়। এখন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজর ৮২৩ জন। ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে মোট প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লখ টাকা। এখন ৪ হাজার ৮৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এছাড়া মূল অনুমোদিত প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের সেপেটম্বর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বও পর্যন্ত। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, টেকসই সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার দেশব্যাপী জাতীয় মহাসড়ককে উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ ক্রমান্বয়ে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীত করার জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেনল্ড ডিজাইন সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ-১ এবং এএইচ), বিমসটেক করিডোর (করিডোর-৩) এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর (এএইচসি-৫) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের জন্য মহাসড়কটি প্রধান করিডোর সেজন্য ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক (এন-২) দুই লেন থেকে চারলেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

মহাসড়কটির বর্তমান অ্যালাইনমেন্ট বরাবর বিদ্যমান রাইট অব ওয়ে গড়ে প্রায় ৩৩ মিটার। মহাসড়কটির দু পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীতকরণের জন্য বিদ্যমান রাইট অব ওয়ে (আরওডব্লিউ) ৩৩ মিটার হতে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত উন্নীত করতে হবে। তাছাড়া দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে বিদ্যমান সড়কের বিভিন্ন সাব-স্ট্যান্ডার্ড বাঁকগুলোও সোজা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সড়কের দুপাশে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কটির উভয় পাশে পৃতক সার্ভিস লেন ছয় লেনে নির্মাণ করে সহায়ক প্রকল্প হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন প্রকল্পটি নেওয়া হয়।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ প্রথমবার প্রকল্পের মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। নতুন ভূমি অধিগ্রহণ নীতিমালা এবং সড়কের অ্যালাইমেন্ট সংশোধনের কারণে ভূমির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তিসহ এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধির জন্য ৭ হাজার ৯৮১ কোটি ৯৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির উপর চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্তে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি ৩১ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং বাস্তবায়ন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিপিপিতে ৯৮৬ দশমিক ৪৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় বাবদ ৩ হাজার ৪২৯ কোটি ৯০ লাখ ২৪ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল। নতুন ভূমি অধিগ্রহণ নীতিমালা এবং সড়কের অ্যালাইনমেন্ট সংশোধনের কারণে ভূমির পরিমাণ ৩৯২ দশমিক ৩২ একর ও ব্যয় ৩ হাজার ৬৬১ কোটি ৩০ লাখ ৯২ হাজার টাকা বৃদ্ধি, ইউটিলিটি স্থানান্তর অঙ্গে ৪১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর পরামর্শক সেবা খাতে ১ হাজার ৪৯৭ জনমাস ও ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বৃদ্ধি। এছাড়া সীমানা পিলার নির্মাণে ৭৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর ৬ মাস বৃদ্ধি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির( একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।

প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিকে তারা মনে করেছিল কম সময়ের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবায়ন পর্যায় গিয়ে সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শক ব্যয়ও বাড়ছে। এছাড়া সাধারণ এনজিওরা পরামর্শক হিসেবে কাজ করে। সেক্ষেত্রে কাজের সময় ও পরামর্শকের সংখ্যা বাড়ায় এ খাতে ব্যয় বেড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ,গ্যাস এবং টেলিফোনসহ সেবা সংস্থাগুলোর তার ও খুঁটি সরাতে গিয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে এবং ব্যয়ও বাড়ছে। তবে আমরা বলেছি পুরনো তারগুলো ব্যাহার করা যায় কি না। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন— যে তার একবার কাটা পড়ে সেগুলো জোড়া দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায় না। তবে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিগুলো সেগুলো অপসারণ করা হবে সেগুলো আবার অন্য স্থানে ব্যবহার করা যাবে। সেগুলোর বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে আরও বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে ঢাকা হতে সিলেটের তামাবিল পর্যন্ত ২৬৫ দশমিক ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ সহজতর হবে তাই প্রকল্পটির সংশোধন অনুমোদন যোগ্য। প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ইউটিলিটি স্থানান্তর, পরামর্শক সেবা এবং সীমানা পিলার নির্মাণ করা হবে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

চারলেনের মহাসড়ক ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর