দেশে কদর নেই, একের পর এক পদক জিতে চলছেন প্রিয়া-মর্জিনা-নাজমুলরা
৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:২৬
কক্সবাজার: জেলা শহরের খাঁজা মঞ্জিল এলাকার নুরুল হকের মেয়ে নূর বাহার খামন প্রিয়া (১৮)। তিনি ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় উশু দলের হয়ে স্বর্ণ পদক অর্জন করেছেন। ‘উশু তাউলু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়-২১’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক উশু ফেডারেশন ভার্চুয়ালি এটির আয়োজন করে।
আরেক খেলোয়াড় মর্জিনা আক্তার (২২) এই প্রতিযোগিতায় সিলভার পদক অর্জন করেন। একইভাবে নাজমুল হাসান (২২) দেশের জাতীয় দলের হয়ে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। এ ছাড়াও প্রিয়া ২০১৯ সালে সাউথ এশিয়ান গেমসে তামা ও ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেছিলেন।
শুধু প্রিয়া, মর্জিনা ও নাজমুল নয়— এমন আরও অনেকে উশুতে সফলতা অর্জন করছেন। মধ্যবিত্ত পরিবরের এই তরুণ-তরুণীরা বাংলাদেশের হয়ে সফলতা অর্জন করলেও দেশে তাদের নেই কোনো সম্মাননা, নেই সঠিক মূল্যায়ন।
কক্সবাজারে এখন উশু প্রশিক্ষণের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে স্বীকার করেছেন খোদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরতরা।
এই খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য মতে, উশু প্রশিক্ষণের জন্য কক্সবাজার স্টেডিয়ামে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট ইনডোর। স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রশিক্ষণের জন্য মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেও বেশিরভাগ সময় তাদের প্রশিক্ষণ নিতে হয় স্টেডিয়ামের বাইরে, ঈদগাহ ময়দানে অথবা সমুদ্র সৈকতে। ঝড়বৃষ্টিসহ নানা প্রতিকূলতার মাঝে বড় বড় সফলতা অর্জন করেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যথাযথ মূল্যায়ন পাচ্ছেন না এসব খেলোয়াড়রা। শুধু আশ্বাসের বাণী শোনানো হয়। উশু একটি আন্তর্জাতিকমানের খেলা হওয়ার পরেও শুধু অসচেতনতার কারণে অনেক অভিভাবকের কাছে এই খেলার তেমন গুরুত্ব নেই। এ ছাড়া জেলার অনেক স্কুল উশুকে এখনও ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। যার ফলে অনেক বড় সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে রয়েছে।
স্বর্ণপদক জয়ী নূর বাহার খানম প্রিয়া বলেন, ‘পরিবার-সমাজসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও উশু প্রশিক্ষক জিয়া উল হক জিয়া ও বাবাসহ কয়েকজন মানুষের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণায় আজকের এই অর্জন। এই অর্জন আমার একার নয়, এটি পুরো কক্সবাজারবাসীর। যারা আমার সফলতার জন্য নিরলস পরিশ্রম করছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি চাই কক্সবাজারে উশু’র সুষ্ঠু পরিবেশ। যেন আমার মতো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে না হয় অন্যদের।’
আন্তর্জাতিক উশু খেলোয়াড় ও জেলা উশু প্রশিক্ষক জিয়া উল হক জিয়া জানান, উশুতে ভালোমানের খেলোয়াড় গড়ে তোলার তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেক অভিভাবক উশু খেলার গুরুত্ব বোঝেন না। লেখাপড়ার পাশাপাশি উশু শিখার মাধ্যমে একজন শিশুর মানসিক বিকাশের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আত্মরক্ষা করতে পারে। এই খেলায় কক্সবাজারের ছেলে-মেয়েরা সুযোগসুবিধা পেলে আরও অনেক ভালো করতে পারবে।
ক্রীড়াপ্রেমীরা জানান, কক্সবাজারের ছেলে-মেয়েরা উশু খেলায় অনেক ভালো করছে। এ পরিস্থিতিতে ভালো প্রশিক্ষণ ও পরিবেশ পেলে এখান থেকে অলম্পিকেও যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিকমানের এ খেলাকে অবহেলা করা উচিত হচ্ছে না। এর জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দেওয়ার দাবি করেন তারা।
জেলার উশু এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শেখ সেলিম জানান, কক্সবাজারের সন্তানরা উশুতে স্বর্ণ ও রূপাসহ নানা পদক অর্জন করেছে। এই খেলোয়াড় এবং উশুকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে জেলার উশু খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনবে।
জেলার ক্রীড়া লেখক সমিতির সভাপতি মাহাবুবুর রহামন জানান, শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও গত কয়েকবছর ধরে কক্সবাজারের ছেলেরা উশু খেলায় সুনাম অর্জন করছে। এখানের বেশিরভাগ খেলোয়াড় মধ্যবিত্ত পরিবারের। সুনাম অর্জনের পর এই খেলোয়াড়দের যদি রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সম্মাননা দেওয়া হয় তাহলে খেলোয়াড়রা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে।
কক্সবাজারের ক্রীড়া সংস্থারসহ-সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু জানান, উশু খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের যে পরিবেশ দরকার তা এখনও কক্সবাজারে সৃষ্টি হয়নি। নেই কোনো ইনডোর স্টেডিয়াম। জেলার উশু খেলোয়াড়দের যে অর্জন তা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আসলে উশু’র জন্য তেমন বেশি কিছু করা সম্ভব হয়নি। যদিও আমাদের প্রচণ্ড আন্তরিকতা ও আগ্রহ রয়েছে। তবে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে অচিরেই ইনডোর প্রশিক্ষণের ভবণ নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এটি হলে মার্শাল আর্টের ইভেন্টগুলো প্রশিক্ষণের সুষ্ঠু পরিবেশ আসবে।
সারাবাংলা/এনএস/একে
উশু তাউলু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়-২১ নূর বাহার খামন প্রিয়া স্বর্ণ পদক