মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ঘিরে হচ্ছে স্মৃতি জাদুঘর
৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫১
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ এমভি আকরামকে ঘিরে স্থাপন হবে একটি নৌ জাদুঘর। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে এটি হতে পারে। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন অপারেশন জ্যাকপটের স্মৃতি ধরে রাখতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ এমভি একরাম’কে উপজীব্য করে একটি নৌ-জাদুঘর স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটি নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব খাজা মিয়া। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সমীক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে শুরু হয়ে মে মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কার্যবিবরণীতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) কামরুন্নাহার জানান, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অন্যতম অধ্যায় অপারেশন জ্যাকপট। জাতির পিতার ৭ই মার্চের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাকে সাড়া দিয়ে ফ্রান্সের তুলন শহরে প্রশিক্ষণরত ৮ জন বাঙালি মেরিন অফিসার ১৯৭১ সালে ৩০ মার্চ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চলে আসেন। নানা পথ পাড়ি দিয়ে তারা ১৯৭১ সালে ৯ এপ্রিল ভারতে এসে পৌঁছান। ভারতীয় নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসারেরা বাংলাদেশি প্রবাসী সরকারকে সামরিক সহায়তার অংশ হিসেবে এই বাঙালি নৌ অফিসারদের সঙ্গে আরও ১৬০ জন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাকে কঠোর নৌ কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেন।
১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে এই নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত হামলায় প্রকম্পিত হয়ে উঠে চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর ও খুলনার দখলদার বাহিনীর নৌ সম্পদগুলো। কয়েক ঘন্টার মধ্যে ডুবে যায় হাজার হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অসংখ্য জাহাজ। বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের পরিবহন চ্যানেল তথা শত্রু পক্ষের নৌ পথে অস্ত্র পরিবহন ব্যবস্থা। মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি সমন্বিত এই গেরিলা আক্রমণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মনোবলে সুদৃঢ আঘাত হানে। একইসঙ্গে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বলে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে যেভাবে বিভ্রান্ত করছিল অপারেশন জ্যাকপট তার সমুচিত জবাব হিসাবে ইতিহাসে স্থান করে নেয়। সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ওই বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়।
কামরুন্নাহার আরও জানান, যেসব জাহাজ এই অপারেশনে ডুবিয়ে দেওয়া হয়— এমভি একরাম তাদের মধ্যে অন্যতম। এটি চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে নৌ-কমান্ডোরা ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে এটি জনৈক ব্যবসায়ী ক্রয় করেন এবং ২০০৮ সালে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জের শাহেন শাহ ডকইয়ার্ডে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে এর ইতিহাস সম্পর্কে দৃষ্টিগোচর হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চলতি বছরে বিআইডব্লিউটিএ জাহাজটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তবে, পরবর্তীতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ করে এমভি একরামকে রক্ষণাবেক্ষণ করে এটিকে শীতলক্ষ্যা নদী তীরে স্থাপন করার। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানকে কেন্দ্র করে একটি নৌ জাদুঘরে রূপান্তর করার জন্য সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য এই সমীক্ষা প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় সমীক্ষা সম্পাদনের জন্য পরামর্শক ব্যয়, নৌ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন, প্রস্তাবিত জাদুঘরের একটি থ্রিডি ডিজাইন প্রণয়ন এবং নরওয়ের ভাসা নৌ জাদুঘর পরিদর্শন ইত্যাদিসহ আনুষঙ্গিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সভার সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব খাজা মিয়া বলেন, এমন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে এই মন্ত্রণালয়ের আগের অভিজ্ঞতা নেই। তাই মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সমীক্ষা করার আবশ্যকতা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্পের সম্ভব্যতা যাচাই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
কোন প্রতিষ্ঠান জাদুঘরের নকশা প্রণয়ন করবে সভায় জানতে চান স্থাপত্য অধিদফতরের প্রতিনিধি। এর জাবাবে বলা হয়, যেহেতু এটি সমীক্ষা প্রকল্প সেহেতু বর্তমান নকশা প্রতিষ্ঠানকারী নামের উল্লেখ করা প্রয়োজন নেই। তবে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের পর প্রকল্পের মূল কার্যক্রমে নকশা প্রণয়নকারীর নাম সংযুক্ত রাখা হবে। সমন্বয় করে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রমটি সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দেন।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস