পাহাড়ে আস্তানা বানিয়ে ‘অপরাধের সাম্রাজ্য’ খাদিজার
৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে এক নারীকে ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর তার অপরাধ জগৎ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, খাদিজা বেগম নামে ওই নারী আলাদা-আলাদা নারী ও কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন। মাদক বিক্রি, পাহাড়ে জমি দখল, জুয়ার আসর পরিচালনা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের জন্য ভাড়ায় নারী ও কিশোরদের সরবরাহসহ নানা অপরাধে জড়িত। পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা তার সাম্রাজ্য ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ঘেরা। দীর্ঘসময় ধরে নানা অপরাধে যুক্ত হলেও পুলিশের কাছে তার নামে কোনো অভিযোগ নেই। ফলে নিজেকে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরেই রাখতে পেরেছেন এই নারী।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার রউফাবাদ খালপাড় থেকে খাদিজা বেগমকে (৪২) এক হাজার ১৭০টি ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। খাদিজার স্বামী, মেয়ে এবং জামাতাও মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত ২৩ নভেম্বর খাদিজার মেয়ে ও জামাতা ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন।
মেয়ে-জামাতার সূত্র ধরে খাদিজা গ্রেফতার হয়েছে জানিয়ে বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘খাদিজার বিরুদ্ধে থানায় সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। মৌখিক কিছু অভিযোগ আছে। তবে মেয়ে ও জামাতার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা খাদিজার বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। খাদিজা পাহাড়ের ভেতরে এমন এক এলাকায় বাড়ি বানিয়েছে, যেখানে রউফাবাদ থেকে পায়ে হেঁটে যেতে অন্তত কুড়ি মিনিট লাগে। অভিযানে শুরুতেই খাদিজাকে আটক করা হয়। তবে তার স্বামী আব্দুল মান্নান পাহাড়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তাদের রান্নাঘরে তল্লাশি করে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।’
ওসি জানান, খাদিজার বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে অত্যাধুনিক আইপি ক্যামেরা লাগানো আছে। সেই ক্যামেরার লিংক রেখেছে নিজের মোবাইলে। ঘরে বসেই মোবাইলে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে খাদিজা। আবার নিজস্ব বাহিনীর লোকজন বাসার আশপাশে পাহারায় থাকে।
ওসি বলেন, ‘নারী ও কিশোরদের নিয়ে খাদিজা কয়েকটি বাহিনী তৈরি করেছেন। এসব বাহিনীতে অন্তত ৫০ জন নারী ও কিশোর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত খাদিজা। বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নগরীর বিভিন্নস্থানে ইয়াবা সরবরাহ করে। নিজ বাসায় দিনরাত জুয়ার আসর বসায়। পাহাড়ে সরকারি খাস জায়গা দখল করে বিক্রি করে। বিরোধপূর্ণ জায়গার দখল নিয়ে দিতে বাহিনীর সদস্যদের সরবরাহ করে।’
দুর্গম পাহাড়ে আস্তানা গড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকায় এবং প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ এতদিন থানায় অভিযোগ করেনি বলে জানান ওসি কামরুজ্জামান।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খাদিজার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণে তার অপরাধের খবর এতদিন ধামাচাপা ছিল।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম