Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দিতে চান রাজারবাগের পীর’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:০০

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দিতে চান রাজারবাগের পীর এবং তার অনুসারীরা। গোপালগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ‘গোলাপগঞ্জ’ করতে চান তারা। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে নূরানীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের নাম পরিবর্তন করে নূরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম পরিবর্তন করে আমানবাড়িয়া করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

রাজারবাগ দরবার শরিফ থেকে প্রকাশিত আলোচিত দুটি পত্রিকা ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ ও ‘দৈনিক আল ইহসান’র মাধ্যমে এসব প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

রোববার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের দাখিল করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ। মানুষের এই ধর্মানুভূতি কাজে লাগিয়ে এই পীর এবং তার দরবার শরিফ সামাজিকভাবে কুসংস্কার, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। পীর দিল্লুর রহমানের দরবার থেকে প্রকাশিত আলোচিত দুটি পত্রিকা ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ ও ‘দৈনিক আল ইহসান’র মাধ্যমে গুটি কয়েক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে নানাভাবে ধর্মীয় উগ্র ও জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে।

তাদের এসব কার্যক্রম সরাসরি সরকারি নীতিমালা, দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী। দেশের বিভিন্ন থানায় রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর ও তার মুরিদদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলা ও মামলাগুলোর তদন্তের ফলাফলে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতামতে বলা হয়েছে, রাজারবাগ দরবারের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘দৈনিক আল ইহসান’, মাসিক ‘আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা, তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত বিভিন্ন বই, ইতিপূর্বে তাদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন জেলায় তাদের অনুসারীদের কার্যক্রমের কারণে রুজুকৃত মামলা ও মামলাগুলোর তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা ইসলাম এবং অনেক ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের খণ্ডিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে এ দেশের ধর্মভীরু মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করে ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ও তথাকথিত জিহাদকে উস্কে দিচ্ছে। এদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো যে উদ্দেশ্যে নিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করছে ও কার্যক্রম চালাচ্ছে- রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর, তার সহযোগী ও অনুসারীদের কার্যক্রম জঙ্গিদের কার্যক্রমে সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মের মানুষকে, তাদরে ভাষায় মালাউনদের হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে ফতোয়া দিয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে কৃতল (কুপিয়ে বা জবাই করে হত্যা) আদেশ দিয়েছে, যা মূলত বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের মানুষকে হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ। এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধীদের অর্থ্যাৎ ভিন্ন ধর্মালম্বীদের হত্যা করার ও ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের কৌশল। তাদের এ ধরনের বক্তব্য মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করবে, অসহিষ্ণু করবে এবং অসম্প্রদায়িক চেতনা নষ্টে ভূমিকা রাখবে।

সিটিটিসির মতামতে আরও বলা হয়েছে, তাদের প্রতারণা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে মূলত তারা এদেশের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসম্প্রদায়িক চেতনা এবং গণতন্ত্রবিরোধী একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠী তৈরি করতে চাচ্ছে। তাছাড়া তারা ছোঁয়াচে রোগবিরোধী ও বাল্যবিবাহের পক্ষে বিভিন্ন বক্তব্য ও ফতোয়া দিয়ে ধর্মভীরু ও সহজ সরল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

সার্বিক পর্যালোচনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, তারা এখন জঙ্গি সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত না হলেও তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা, বক্তব্য, মুরিদ ও অনুসারীদের প্রতি তাদের নির্দেশনার ফলে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের এসব বক্তব্য ও প্রচার-প্রচারণা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের ‘লোন উলফ’ হামলায় উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

এদিন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দাখিল করা প্রতিবেদন এবং পীরের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রাজারবাগ দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার চক্রের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারবেন বলে আদেশ দেন। এবং মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সিটিটিসি ও সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট আমলে নিতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। একইসঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে রাজারবাগ দরবার শরিফের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া মামলার তদন্তের স্বার্থে সিআইডি, কাউন্টার টেররিজম ও দুদক চাইলে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীরের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। দুদকের পক্ষে ছিলেন জাহিদ হোসেন দোলন।

এর আগে, গত ২ ডিসেম্বর পীর দিল্লুর রহমানসহ চার জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে আইনজীবী এমাদুল হক বশির হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। তারও আগে রাজারবাগ পীর ও তার চক্র দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদরাসার শিক্ষক, ব্যাবসায়ীসহ আট ভুক্তভোগীর পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন আইনজীবী শিশির মনির। রিটে পীর ও তার চক্রের দ্বারা রিটকারীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর মামলা দায়েরের অভিযোগ আনা হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

নাম রাজারবাগ দরবার শরিফ সিটিসি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর