মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে
৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫২
ঢাকা: বিতর্কিত মন্তব্য ও ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় আলোচনায় আসা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়ছে। নিজ দফতরে জমা দেওয়া পদত্যাগপত্রে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার যে ভুল তারিখ লেখা ছিল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর আগে সেটি সংশোধনও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে তার দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন পদত্যাপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব মাহমুদ ইবনে কাসেম প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ডা. মুরাদ মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে পদত্যাগপত্র পাঠান নিজ দফতরে। প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে তার পদত্যাগপত্রটি বিকেল ৩টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পৌঁছে দিয়েছি।’ তিনি জানান, পদত্যাগপত্রে যে ভুল ছিল, তা সংশোধন করে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেটি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন-
- মুরাদের পদত্যাগপত্রেও বড় ভুল
- প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে মুরাদের পদত্যাগ
- ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষমা চাইলেন ডা. মুরাদ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে লেখা পদত্যাগপত্রে ডা. মুরাদ লিখেছেন, ২০১৯ সালের ১৯ মে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার নিজ বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি সরকারের ডা. মুরাদ হাসানকে আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আমি ডা. মুরাদ হাসানকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা আজ (সোমবার) রাত ৮টার সময় পৌঁছে দিয়েছি।
সম্প্রতি এক ফেসবুক লাইভে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন ডা. মুরাদ হাসান। মুহূর্তেই তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে অভব্য, শিষ্টাচার বহির্ভূত, নারীবিদ্বেষী, কুরুচিপূর্ণ বলে অভিহিত করেন অনেকেই। সরকারের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়— এমনটি বলেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও।
একদিন পরই একটি ফোনকল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহির সঙ্গে সেই কথোপকথনেও ডা. মুরাদকে অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি না এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে নেওয়া হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস কথাবার্তা বলতেও শোনা যায়।
জাইমাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য এবং ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় চরম বিতর্কের মুখে পড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ। নারী অধিকারকর্মীসহ রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রীর প্রতি। কোনো কোনো বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগও চাওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর সোমবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
ডা. মুরাদ ডা. মুরাদ হাসান তথ্য প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মুরাদ হাসান