Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৃষ্টিতে আক্রান্ত ৩ লাখ হেক্টর ফসলি জমি, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:১৯

পানিতে তলিয়ে গেছে ধান গাছ, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় হয়ে স্থলে আঘাত হানতে পারেনি জাওয়াদ। সমুদ্রেই নিঃশেষ হলেও এর প্রভাবে লঘুচাপ টানা তিন দিন ধরে ঝরেছে বৃষ্টি হয়ে। আর তাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষকের ঘরে ওঠার অপেক্ষায় থাকা আমন ধানের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা জানাচ্ছেন, ফসলের মাঠে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। মাড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকা ধানও নষ্ট হচ্ছে কৃষকের উঠানে। তাতে মাঠে থাকা আমন ধানের এক-তৃতীয়াংশই ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

কেবল আমন ধান নয়, ক্ষতি হয়েছে সদ্য রোপণ করা আলু ক্ষেতেরও। আলু উৎপাদনের শীর্ষে থাকা মুন্সিগঞ্জে ফসলটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে দেশের ৩২ জেলায় ২২ ধরনের ফসলের প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছে, এখনো তারা ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে উঠতে পারেননি। অন্যদিকে কৃষকের বলছেন, অসময়ের এই বৃষ্টি তাদের যে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, দেশের ৩২টি জেলায় বিভিন্ন ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এসব জেলায় ২৫ লাখ ২০ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে এসব জেলায় দণ্ডায়মান জমির পরিমাণ ১৫ লাখ ১২ হাজার ৬১১ হেক্টর। আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯১ হেক্টর। আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন, বোরো বীজতলা, গম, শাকসবজি, সরিষা, ভুট্টা, গোল আলু, খেসারি, মসুর, মটর, মাসকালাই, চীনাবাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মিষ্টি আলু, পেঁয়াজের বীজতলা, আখ, ফেলন, ক্ষীরা ও বাঙ্গি।

যেসব জেলা এই অকালবৃষ্টিতে আক্রান্ত সেগুলো হলো— ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, ভোলা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, বৃষ্টিতে ২ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলের জমি আক্রান্ত হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। দেশের কোথাও কোথাও এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোথাও বৃষ্টি থেমে গেছে। পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। আমরা ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছি।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, কৃষকের এক-তৃতীয়াংশ ধান ক্ষেতে রয়ে গেছে। এসব ধান কেটে ক্ষেতেই রাখা হয়েছিল। প্রায় শুকিয়ে গিয়েছিল ধানের ন্যাড়াগুলো। এখন এসব ধান মাড়াই করতে খুবই কষ্ট হবে। ক্ষেতে থাকা এসব ধান অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া বাড়িতেও নষ্ট হয়েছে মাড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকা কিছু ধান। নষ্ট হয়েছে সিদ্ধ করা ধানও। সব মিলিয়ে অসময়ের এই বৃষ্টিতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের হিমেল সারাবাংলাকে বলেন, অধের্কেরও কম ধান বাড়িতে তুলতে পেরেছি। ধান কেটে মাঠেই রাখা হয়েছিল, সেগুলো দুয়েকদিনের মধ্যে মাড়াই করা হতো। কিন্তু বৃষ্টিতে এখন সেসব ধান পানির নিচে। আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছি। নষ্ট হয়েছে আলু ক্ষেত। কয়েকদিন আগেই আলু রোপণ করা হয়েছিল। এসব আলু নষ্ট হয়ে গেছে।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের কৃষক মো. শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, এক-তৃতীয়াংশ ধান ক্ষেতে রয়ে গেছে। কিছু ধান কাটা ছিল। আর কিছু ধান কাটা হয়নি। ক্ষেতে থাকা সব ধানেরই ক্ষতি হয়েছে।

বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ফসল, ছবি: সারাবাংলা

বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ফসল, ছবি: সারাবাংলা

মুন্সীগঞ্জ থেকে সারাবাংলার প্রতিনিধি শহীদ ই হাসান তুহিন জানিয়েছেন, আলু উৎপাদনের শীর্ষে থাকা জেলাটিতে বৃষ্টির প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে হেক্টরের পর হেক্টরের ফসল। রোপণ করা আলুর বীজ নষ্ট হওয়ায় কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ৬ উপজেলার ৩৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছিলেন কৃষকরা। এসব জমির প্রায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

সারবাংলার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলু আবাদের জন্য কোথাও কোথাও প্রস্তুত করা হয়েছে জমি, কোথায় সদ্য রোপণ করা হয়েছে বীজ, আবার কোনো কোনো জমিতে গজিয়েছে চারা। তবে টানা বৃষ্টিতে সব জমিতেই জমেছে পানি। নিচু এলাকার জমিগুলো আবার একবারেই পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে সেচ দিয়ে পানি নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকরা।

এদিকে, বগুড়ারা সারাবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অঞ্চলটিতে পানি জমার মতো কোনো বৃষ্টি হয়নি। তাই সেখানে আলুর কোনো ক্ষতি হবে না। নীলফামারীর একজন কৃষক দ্বিজেন সারাবাংলাকে জানান, ওই অঞ্চলটিতেও বৃষ্টি হয়নি। সেখানে এখন সেচের পানি দিয়ে বোরো আবাদের প্রস্তুতি চলছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

৩ লাখ হেক্টর ফসলি জমি জাওয়াদ বৃষ্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর