Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্তদের করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বেশি: সমীক্ষা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আইসিইউতে মারা যাওয়া ৮৯ শতাংশ রোগীই আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সমীক্ষা দলের সদস্যরা বলছেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগ আছে, তারা করোনায় আক্রান্ত হলে আইসিইউতে নেওয়ার পরও তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত হলেও যাদের আগে থেকে শরীরে কোনো জটিল রোগ নেই, তাদের মৃত্যুঝুঁকি কম।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ওপর ‘মৃত্যুঝুঁকির সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক এ সমীক্ষা চালানো হয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেনারেল হাসপাতাল যৌথভাবে এ সমীক্ষা চালিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা অবশ্য এই সমীক্ষাকে গবেষণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ শুরুর পর চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ২৩৪ জন রোগীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের রক্তের বিভিন্ন উপাদান বিশ্লেষণ করে মৃত্যুঝুঁকি নির্ণয় করাই ছিল এই সমীক্ষার উদ্দেশ্য।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্ত রোগীদের রক্তে শ্বেতকণিকা, হিমগ্লোবিন, অক্সিজেনের চাপ, সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন, ফেরিটিন, ডি-ডাইমার এবং ট্রপোনিন— এসবের মাত্রা আমরা যাচাই করে দেখেছি। এসব উপাদান কোন মাত্রায় থাকলে বা বেড়ে গেলে কিংবা কমে কোন মাত্রায় পৌঁছালে রোগী মারা যাচ্ছে, সেটি আমরা যাচাই করে দেখেছি। গবেষণার মাধ্যমে আমরা মৃত্যুঝুঁকি আছে অথবা মৃত্যু‍ঝুঁকি নেই— এমন মাত্রা নির্ধারণ করেছি। এটা ভবিষ্যতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দেবে বলে আমরা মনে করি। এখন এই গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা বসে তাদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবেন।’

বিজ্ঞাপন

গবেষক দলের সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, আইসিইউতে ভর্তি হওয়া ২৩৪ জন রোগীর মধ্যে ১৫৬ জন মৃত্যুবরণ করেন। সুস্থ হয়ে ফিরে যান ৭৮ জন। মারা যাওয়া ৭৩ শতাংশ রোগীর বয়স পঞ্চাশের বেশি। তাদের মধ্যে ১৩৯ জন অর্থাৎ ৮৯ দশমিক ১ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় আগে থেকেই ভুগছিলেন। আবার এদের মধ্যে ৯৩ রোগীর একাধিক স্বাস্থ্য জটিলতা ছিল, যেমন— ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানির মতো সমস্যা।’

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিইউতে মারা যাওয়া ৭৫ দশমকি ৫ শতাংশ রোগীর রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ১১ হাজার ঘনমিলিমিটার। কিন্তু মারা যাওয়া রোগীদের রক্তে শ্বেতকণিকার মাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১১০ দশমিক ৬ ঘনমিলিমিটার, যাকে রক্তে শ্বেতকণিকার সংকটপূর্ণ মাত্রা বলা হয়েছে। অর্থাৎ শ্বেতকণিকার মাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

আইসিইউতে মারা যাওয়া রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম, যার গড় পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ মিলিমিটার। হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১২ থেকে ১৭ গ্রাম।

মারা যাওয়া ৭৩ শতাংশ রোগীর রক্তে অক্সিজেনের চাপ ছিল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে গড়ে ৫০ দশমিক ৪ মিলিমিটার কম। স্বাভাবিক মাত্রা ৭০ থেকে ৯০ মিলিমিটার।

এছাড়া ৯৮ শতাংশ রোগীর রক্তে সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের (সিআরপি) পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। স্বাভাবিক মাত্রা লিটারে ৫ মিলিগ্রামের কম হলেও এসব রোগীর রক্তে সিআরপি প্রতি লিটারে গড়ে ১০২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

মারা যাওয়া ৭৫ শতাংশ রোগীর রক্তে ফেরিটিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চমাত্রা পরিলক্ষিত হয়, যার পরিমাণ ছিল প্রতি মিলিলিটারে ৯০১ দশমিক ৫ ন্যানোগ্রাম। স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মিলিলিটারে ৯ থেকে ৩৭০ ন্যানোগ্রাম।

মারা যাওয়া ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ রোগীর রক্তে ডি-ডাইমারের পরিমাণ স্বাভাবিকের (০.৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি মিলিলিটারে কম) চেয়ে উচ্চমাত্রা পরিলক্ষিত হয়, যা ছিল ২ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম।

এছাড়া ৭৬ শতাংশ রোগীর রক্তে ট্রপোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, শূন্য দশমিক ৮১ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত ছিল। এর স্বাভাবিক মাত্রা শূন্য দশমিক ৪ ন্যানোগ্রাম।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) মলিকুলার বায়োলজিস্ট ডা. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের রক্তে প্রয়োজনীয় উপাদানের কাট অফ ভ্যালু অর্থাৎ সংকটপূর্ণ মাত্রাটা নির্ধারণ করেছি। অর্থাৎ কোন মাত্রায় গেলে আমরা রক্তের উপাদান রোগীর জন্য সংকটপূর্ণ বলতে পারব, সেটি নির্ধারণ করেছি। আমরা যাদের নিয়ে গবেষণা করেছি, তাদের তিন ভাগের দুই ভাগ রোগীই মারা গেছেন। তাদের রক্তে উপাদানের মাত্রা কেমন ছিল, সেটা নির্ধারণ করেছি।’

সমীক্ষায় আরও যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব, জুনিয়র কনসালট্যান্ট রাজদ্বীপ বিশ্বাস ও মৌমিতা দাশ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ইফতেখার আহমেদ, সিভাসুর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ত্রিদীপ দাশ, মলিকিউলার বায়োলজিস্ট প্রণেশ দত্ত ও তানভির আহমেদ নিজামী।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

করোনাভাইরাস করোনায় মৃত্যুঝুঁকি কোমরবিডিটি জটিল রোগে আক্রান্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর