ছাত্রদের টিয়ারশেল ছুড়লেন- এ কী করলেন!
৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:০৫
।। জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একদিকে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিয়ে প্রস্তুত পুলিশ। অন্যদিকে অদম্য একদল তরুণ। মাঝখানে হঠাৎ এসে দাঁড়ালেন সাদা শার্ট পরা, কালো ফ্রেমের চশমা চোখে এক ভদ্রলোক। একদল পুলিশের মাঝে হাত উচিয়ে তাদেরকে কি যেন বোঝাচ্ছিলেন তিনি। কাছে যেতে বোঝা গেল পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করছিলেন তিনি। একাই!
খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম। চোখের সামনে ছাত্রদের ওপর টিয়ারশেল ছোড়া সহ্য করতে পারেননি, তাই বয়স আর সামর্থ ভুলে একাই গিয়েছিলেন পুলিশদের বোঝাতে। তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমার সামনে আমার ছাত্রদের ওপর টিয়ারশেল ছুড়লেন- এ কী করলেন!’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ-টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকার ভেতরেই ছিলেন। রাত সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার এক পর্যায়ে কার্জন হল এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন তারা। এ সময় শহীদুল্লাহ এবং ফজলুল হক হলের ছাত্ররা অধিকাংশই ছিলেন তাদের রুমে। এক সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতারা কার্জন হলের ভেতরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে এই দুই হলের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে বের হয়ে আসে। ছাত্রলীগ এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
শহীদুল্লাহ হলের ছাত্ররা জানান, ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে এক দল বহিরাগত ছাত্রলীগ তাদের হলে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে হলের ভেতরে টিয়ারশেল ছুড়ে পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তোলে। বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটির হয়ে এই দুই হলের কোনো ছাত্র আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলেও জানান।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা উত্তেজিত অবস্থায় দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থান নেন। এর মাঝে উত্তেজিত ছাত্রদের ঠাণ্ডা করতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আইনুল ইসলাম।
তিনি ছাত্রদেরকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে বলছিলেন, ঠিক এরই মধ্যে পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন। এদের মধ্যে একজন হল শাখার সহ-সভাপতি ইফতেখার আহমেদ সোহান (২৪), যিনি উত্তেজিত ছাত্রদের শান্ত হতে বোঝাচ্ছিলেন।
শিক্ষক এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশের কাছে একাই যান- টিয়ারশেলের জবাব নিতে। তাদের প্রশ্ন করেন তিনি, ছাত্রদের টিয়ারশেল ছুড়লেন- এ কী করলেন! আমার সামনে আমার ছাত্রদের টিয়ারশেল ছুড়লেন!
ফজলুল হক হল ও শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা জানান, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা কলেজসহ বাহিরের ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিয়ে ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এ সময় তিনি মাথায় হেলমেট পড়ে ছিলেন। বিনা উস্কানিতে হলের ভেতরে টিয়ারশেল ছুড়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার অপরাধে পুলিশ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
শহীদুল্লাহ হলের হাউজ টিউটর পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বাইরের কর্মী ও পুলিশ নিয়ে এসে এভাবে একটি হলে হামলা চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ সদস্য হামলা চালিয়েছে, সেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সারাবাংলা/জেডএফ/এমআইএস/এটি