পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ: জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ
৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫২
ঢাকা: রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের পৌর এলাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে তাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রংপুরের জেলা ও দায়রা জজকে প্রধান করে বিচার বিভাগীয় কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদ মর্যাদার ব্যক্তিকে ওই কমিটিতে রাখতে বলা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
রংপুরের হারাগাছ থানার পৌর এলাকায় তাজুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ৩ নভেম্বর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্তের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত। এরপর তাজুলের সুরতহাল ও ভিসেরা রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়।
৩ নভেম্বর সুরতহাল প্রতিবেদন থেকে উল্লেখ করে অমিত দাশ গুপ্ত আদালতে বলেছিলেন, ২০১৯ সালের এক মামলায় ওই আসামির কাছ থেকে ৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছিল।
তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। মাদক বিক্রয় ও সেবন করে থাকে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত করার নিমিত্তে অনুসন্ধান তদন্ত করে ২ নভেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে থেকে অমিত দাশ গুপ্ত আরও বলেন, তাজুলের শারীরিকভাবে কোনোরকম আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছিলেন, উনাদের সুরতহাল বলছে চিহ্ন নেই। কিন্তু এই যে ছবি, যেটা রংপুর থেকে তাজুলের প্রতিবেশী এক আইনজীবী পাঠিয়েছিল সেখোনে দেখা যাচ্ছে তাজুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। মাথা থেতলানো।
এ সময় জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ঘটনা তদন্তে একজন জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়ার আবেদন করেন। এরপর ভিসেরা রিপোর্টসহ আরও প্রতিবেদন চান আদালত। সেসব প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আজ (৮ ডিসেম্বর) বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ১ নভেম্বর তাজুল ইসলামকে (৫৫) আটকের পর নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ উঠলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হারাগাছ থানা ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। সে সময় ভাংচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। নিহত তাজুল হারাগাছ পৌর এলাকার দালাল হাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, হারাগাছ থানা পুলিশ ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হারাগাছ পৌর এলাকার নতুন বাজার বছি বানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায়। সেখানে তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করে পুলিশ। পুলিশের মারধরে তিনি জ্ঞান হারান। পুলিশ তাকে ধাক্কা দিলে পাশের দেয়ালে আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর চালায় এলাকাবাসী।
তবে হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকারের দাবি, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন এমন খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে গিয়েছিল। আটকের পর তাকে হাতকড়া পরানো হয়। কিন্তু কাপড় নষ্ট করে ফেলায় পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে তাজুল মারা গেছেন।
রংপুরের এ ঘটনায় পুলিশ ও তাজুল ইসলামের পরিবারের পক্ষে থেকে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম