Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাখাইনদের সম্পত্তি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

স্পেশাল করেসপন্ডেট
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৫৬

ঢাকা: পটুয়াখালী জেলার রাখাইন সম্প্রদায়ের জমি জবর দখল, উচ্ছেদ, শ্মশান ও বৌদ্ধ মন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা রক্ষা এবং উচ্ছেদ হওয়া রাখাইনদের পুর্নবাসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করেছে নাগরিক সমাজ।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, কলাপাড়া রাখাইনদের জমি, পুকুর শ্মশানসহ সব কিছু দখল হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্বার্থন্বেষী দালাল চক্রের দৌড়াত্ম এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তার কারণে রাখাইন সম্প্রদায় তাদের ভুমি হারাচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে রাখাইনদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে ওই অঞ্চলের রাখাইনদের অস্তিত্ত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কুয়াকাটা ফ্রাচুইপাড়ায় ১৯২৫ সালে নির্মিত গৌতম বুদ্ধের শয়নরত বৌদ্ধবিহার এলাকার চারপাশ দখল করা হয়েছে। মিস্ত্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহারের জমি দখল করে একের পর এক দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরের মাঠ; দখল করে বাজার বসানো হয়েছে। এছাড়া শ্মশানের অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। টিকে আছে মাত্র ১০-১২ শতাংশ। যেভাবে শ্মশান দখল করা হয়েছে তাতে আগামীতে শবদেহ সৎকারের কোনো জায়গা থাকবে না। এমনকি বর্তমানে রাখাইন সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে যেটুকু শ্মশান রয়েছে সেখানে যাওয়ার পথটুকুও দখল করে নেওয়া হয়েছে। বাজারের ময়লা ফেলা হচ্ছে শ্মশানে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইন পাড়া ছিল। বর্তমানে সেখানে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে। যেসব রাখাইন সম্প্রদায় ওই এলাকায় টিকে আছে তাদের রাত-দিন কাটে আতঙ্কে। ফলে রাখাইন সম্প্রদায় যাতে নির্বিঘ্নে তাদের সম্পত্তি নিয়ে নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। একইসঙ্গে ১৪ দফা দাবি পেশ করে নাগরিক সমাজ।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বেদখলকৃত বৌদ্ধ বিহারের জমি ও রিজার্ভ পুকুর বেদখল করতে হবে। রাখাইনদের বেদখলকৃত শ্মশান ভুমি দখলমুক্ত করে তাদের কাছে ফেরত এবং অবৈধ দখলদারদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

রাখাইন ভাষা রক্ষার্থে প্রথমিক পর্যায়ে অবিলম্বে রাখাইন ভাষায় শিশু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু এবং বিদ্যালয়সমূহে রাখাইন শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। রাখাইন সংস্কৃতি রক্ষা, বিকাশ, চর্চার লক্ষ্যে রাখাইন কালচারাল একাডেমিকে সক্রিয় করতে হবে।

বিকৃত করা রাখাইন পাড়াগুলোর নাম নাম স্ব স্ব ঐতিহ্যগত নামে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। যে সকল রাখাইন অধ্যুষিত গ্রামে শ্মশান ভূমি নেই সেখানে মৃতদেহ সৎকারের জন্য দ্রুত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। ভূমিদস্যু, স্থানীয় প্রভাবশালী এবং সাবেক ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে অবৈধ হাউজিং ব্যবসা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

রাখাইন তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

পটুয়াখালী ও বরগুনায় সর্বশেষ যে দুই হাজার ৫৬১ জন রাখাইন বাস করছেন তাদের পুর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং এই অঞ্চল থেকে যেন রাখাইন মানুষেরা হারিয়ে না যায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাসত্ব আইনের ৯৭ ধারা পরিপুর্নভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ভূমি কমিশনের মাধ্যমে স্থানীয় ভূমি বিষায়ক মামলা, তথ্য-নথি, দলিল পত্র সংরক্ষণ ও কর্ম প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে হবে।

রাখাইনদের সংরক্ষিত পবিত্র-প্রথাগত ভূমি, রাখাইনদের ভূমি, বৃক্ষ, দেবস্থান, মন্দির, বিহার উৎসব মেলা ও এলকায় প্রার্থনা এলাকা, সামাজিক রীতি ও আইনের মাধ্যমে পরিচলানা, রক্ষা- বিকাশের জন্য আইনগত ভাবে স্বীকৃতি, মর্যদা ও দখলমুক্ত করে রাখাইনদের হাতে তুলে দিতে হবে।

রাখাইনদের ঐতিহাসিক স্থান সমূহসহ নিজস্ব সংরক্ষিত এলাকায় কোন ভাবেই অধিগ্রহণ করা চলবে না। বেদখলকৃত, অর্পিত শত্রু সম্পত্তির নামে দখলকৃত জমি রাখাইনদের মাঝে ফেরত দিতে হবে।

রাখাইন এলাকায় জমিতে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাদের পূর্বানুমতিসহ রাখাইন বান্ধব প্রকল্প হাতে নেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে নুর খা লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, হিউম্যান রাইটস সাপোর্টের সোসাইটির মাসুদ আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর