খুচরা খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেখছেন ব্যবসায়ীরা
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:২৭
বাংলাদেশে খুচরা খাত দ্রুত বিকাশমান। এই খাতে এরই মধ্যে ৬০ লাখেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সামনের বছরগুলোতে সুবিধাবঞ্চিত তরুণ, বিশেষ করে নারীদের জন্য এই খাতে জাতীয় পরিসরে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে বাংলাদেশের খুচরা খাতে যুব কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। ব্র্যাক থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি (এসডিপি) এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল খুচরা বিক্রয় খাতে প্রশিক্ষণের পক্ষে অ্যাডভোকেসি করা, বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনাকে উৎহিত করা এবং নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করা।
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির। আলোচনায় অংশ নেন আড়ংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তামারা আবেদ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সুপারশপ স্বপ্নের বাণিজ্য বিষয়ক পরিচালক সাব্বির তানভির সোহেল খান, ইউনিমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মর্তুজা জামান, মীনা বাজারের সিইও শাহীন খান, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের হেড অব অপারেশনস আজিজা আহমেদ, আমানা গ্রুপের এমডি মাসুদুল হক, ব্র্যাকের পরিচালক মারিয়া হকসহ অন্যরা।
খুচরা খাতের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই ব্র্যাক এসডিপি ‘প্রগ্রেসিং দ্য রিটেইল সেক্টর বাই ইমপ্রুভিং ডিসেন্ট এমপ্লয়মেন্ট (প্রাইড)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর লক্ষ্য সরকারের সঙ্গে খুচরা খাতের অংশীদারত্বে নিম্ন আয়ের শহুরে তরুণদের জন্য টেকসই জীবিকার একটি মডেল তৈরি করা।
অনুষ্ঠানে এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, খুচরা খাতে নারীদের প্রশিক্ষণ অবশ্যই প্রয়োজন। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রচারমূলক কার্যক্রম নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন।
আড়ংয়ের এমডি তামারা আবেদ বলেন, নিয়োগকর্তা হিসেবে আমাদের নারী ও পুরুষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আরও আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা এবং যৌন হয়রানি বিষয়ক নীতি থাকা উচিত। শুধু নারীদের জন্য নয়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যও আলাদা শৌচাগার ও শিফটভিত্তিক কাজের সময়সূচি থাকা দরকার।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, খুচরা খাতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান করলেই হবে না, একইসঙ্গে সরবরাহ চেইনের গুণগত মানও উন্নত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, স্বীকৃতি প্রদানসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রাখতে হবে।
মীনা বাজারের সিইও শাহীন খান বলেন, নারীরা পুরুষ কর্মীর মতো কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন না— এটি ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণা। বাংলাদেশের নারী কর্মীরা এটা প্রমাণ করেছেন। আমরা খুচরা খাতে আরও নারী কর্মী চাই। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি অনুসরণের চেষ্টা করি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের জিডিপিতে খুচরা শিল্প উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও এই খাতে আগ্রহী কর্মীদের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। ২০২০ সালে পরিচালিত একটি বেজলাইন জরিপে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতাদের খুব কম অংশই তাদের কর্মীদের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সহযোগিতায় দেশের প্রথম স্বীকৃত খুচরা বিক্রয় প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছে ব্র্যাক এসডিপি । বর্তমানে এই মডিউলের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ শুরুর পর থেকে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা এবং করোনা মহামারি সত্ত্বেও ৫৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
আলোচনায় উঠে আসে— খুচরা শিল্পে পুরুষেরই আধিপত্য, মাত্র ৮ শতাংশ কর্মী নারী। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা ও শারীরিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কম— এই মনোভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো নারী কর্মী নিয়োগ করতে চায় না। অন্যদিকে ব্যবসার ধরন উপযুক্ত নয়, কর্মক্ষেত্রে বাসস্থানের অভাব, নিয়োগের আবেদন করেন না— এমন নানা বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা প্রতিবন্ধীদের নিয়োগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে দেখিয়ে থাকেন।
সারাবাংলা/টিআর
খুচরা বিক্রয় শিল্প খুচরা বিক্রেতা দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি ব্র্যাক