থামেনি অবাধ শিকার, বিলুপ্তির পথে ডাহুক
১০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫২
মৌলভীবাজার: গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত পাখি ডাহুক। কিন্তু কালের বিবর্তন আর মানুষের অসচেতনতার কারণে দৃষ্টিনন্দন এ পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। দৃষ্টিনন্দন এ পাখি সাধারণত নদী খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, ডোবা-নালা, পুকুর, ঝোঁপঝাড়, জলা ও ধানক্ষেতে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু দিনের পর দিন অবাধ শিকার না থামায় ক্রমশই বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টি।
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে কচুরিপানায়, ঝোঁপঝাড়ে বসে উঁচু স্বরে ‘কুব’ ‘কুব’ করে ডাকে পাখিটি। রাত যত গভীর, নিঝুম হয় ততই এদের ডাকাডাকি আরও বেড়ে যায়। সেই ডাক শোনা যায় বহুদূর থেকেই। এ পাখি কচুরিপাতার ফাঁক দিয়ে লম্বা লম্বা পায়ে পানির ওপর চলাফেরার ফাঁকে খাবার সংগ্রহ করে। চতুর এ পাখি সঙ্গী ছাড়া একা একা ঘোরাঘুরি পছন্দ করে না। এ পাখির স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকমের।
গ্রাম-গঞ্জে পুকুরে বসবাস করা ডাহুক মা ছানাসহ বেশি দেখা যায়। এ পাখির কপাল ধবধবে সাদা। মাথা চাঁদের মতো, ঘাড়, পিঠ, ডানা ও লেজের উপরিভাগ কালো। আর গলা, বুক, চিবুক ও দুই চোখই সাদা। পেট ও লেজের তলার রঙ খয়েরি। ডানার নিচে, বুকের দুপাশটা কালো। ঠোঁট হলদে ও লাল। পা হলদে। লম্বা পায়ের আঙুলগুলো ধারালো। এরা বাসা করে পানির কাছে ঝোঁপঝাড় কিংবা গাছগাছালির ডালে।
সাধারণত, ডাহুক পাখির তেল দিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি হয় কবিরাজদের এমন তথ্যের কারণেই এই পাখি সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি হৃদয় দেবনাথ বলেন, ‘খবর পেলে আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে প্রায়ই হাইল হাওর ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে শিকারিদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে পাখিদের উদ্ধার করে মুক্ত করে থাকি। তবে গত দুই বছরে শিকারিদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পাখি উদ্ধার হয় বিপন্ন এই ডাহুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠন পাখিদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনের নানা তৎপরতার কারণে মৌলভীবাজার জেলায় এখন আর আগের মতো প্রকাশ্যে হাটবাজার এমনকি রেস্টুরেন্টে পাখি বিক্রি প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। প্রতিটি এলাকায় তরুণ-যুবকরা সমাজকে সচেতন হলে ডাহুকসহ অন্য পাখিদেরও সংরক্ষণ করা সম্ভব বলেও মত দেন এ পাখিপ্রেমী।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান জানান, ডাহুক পাখি বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। প্রকৃতিতে এই সুন্দর পাখির নিরাপত্তা দিয়ে বাসস্থান রক্ষা করে পরিবেশবান্ধব অবস্থা গড়ে তুলতে পারলে সুন্দর এ পাখির আনাগোনা বাড়ানো সম্ভব। সাধারণত এরা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডিম পাড়ে ৬ থেকে ৭টি। ডিমের রঙ হলুদ। ডিম ফোটে প্রায় ২০ থেকে ২৪ দিনে। মাস তিনেক পর বাচ্চারা আলাদা জীবন বেছে নেয়। এদের খাদ্য তালিকায় থাকে কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়, শামুক, ধান, ডাল, সর্ষে, কেঁচো, মাছ।
শিকারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার কারণে এদের জীবনও হুমকির সম্মুখীন বলেও মনে করেন এই শিক্ষক।
সারাবাংলা/এমও