শিগগিরই বুস্টার ডোজের তালিকা তৈরি শুরু হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
১০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৬
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি চলছে। শিগগিরই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বুস্টার ডোজের তালিকার তৈরির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার ( ৯ ডিসেম্বর) দেশব্যাপী অন্ধত্ব জরিপ-২০২০ এর ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, মহামারি করোনভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের প্রয়োগে অ্যাপ আপডেট ও তালিকা তৈরির কাজ শিগগিরই শেষ হবে। এরপরই শুরু হবে বুস্টার ডোজের প্রয়োগ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ১০০ জনের মধ্যে ১৯ জনের কিছু না কিছু চোখের সমস্যা আছে। যদিও বিশ্বের স্ট্যাটিসটিকস হলো ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনের কিছু না কিছু চোখের সমস্যা থাকে। বাংলাদেশে তার কম আছে এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব যারা আছে তাদের মধ্যে ১.৫০ শতাংশ সমস্যা আছে। ভারতে ১.৭৫, পাকিস্তানে আরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ঢাকায় একটি আই ইনস্টিটিউট হয়েছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজেও চোখ দেখিয়েছেন। এই ইনস্টিটিউটে হাজার হাজার রোগীরা চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের গোপালগঞ্জে আরেকটি আই হাসপাতাল করা হয়েছে এবং আমাদের সামনের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমরা চাচ্ছি যে সারা বাংলাদেশে যে কমিউনিটি ভিশন তৈরি করা হয়েছে সেটা ছড়িয়ে দেওয়া হোক যেন সবাই চিকিৎসা পায়।
দেশের বাইরে থেকে আসার পর কোভিড আক্রান্ত খেলোয়াড়দের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাদের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পেলে জানানো হবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
এদিন রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী অন্ধত্ব জরিপ-২০২০ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ২০০০ সাল থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় এ জরিপ পরিচালনা করে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালনা করা এই জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬০টি ক্লাস্টার থেকে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ১৮ হাজার ৮১০ জন।
অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরে সিআইপিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৯ জন দৃষ্টি ত্রুটিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্বব্যাপি এই সংখ্যা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অন্ধত্ব নিবারণের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।
জরিপের ফলাফলে জানানো হয়, পঞ্চাশোর্ধ জনগোষ্ঠির মধ্যে অন্ধত্বের হার যেখানে ভারতে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ (২০১৫-২০১৯) এবং নেপালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ (২০১২) সেখানে আমাদের দেশে ১ দশমিক ৫ শতাংশ (২০২০) এবং ত্রিশোর্ধ জনগোষ্ঠির মধ্যে যেখানে পাকিস্তানে অন্ধত্বের হার ২ দশমিক ৭ শতাশ (২০০২) সেখানে আমাদের দেশে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশে অন্ধত্বের হার শতকরা ৩৫ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। চিকিৎসাবিহীন ছানি ছিল অন্ধত্বের প্রধান কারণ (৭১ শতাংশ)। এছাড়াও অন্যান্য প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিসজনিত রেটিনোপ্যাথি, গ্লুকোমা, এবং বার্ধক্য জনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ইত্যাদি অন্যতম।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ১৯৯৯-২০০০ সালে পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ছানিজনিত অন্ধ ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার জন যা ২০২০ সালে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার জন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তাফা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আভা হোসেনসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এসএসএ