হার ই-ট্রেড: প্রথম অফলাইন এক্সিবিশনেই বাজিমাত
১১ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৫১
ঢাকা: রঙ-বেরঙের শাড়ি, গয়না, জামাকাপড়, খাবারদাবার, ঘর সাজানোর উপকরণ— কী নেই এখানে! কেউ ব্যস্ত জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখায়, কেউ ব্যস্ত কেনাকাটায়। আবার কেউ চেখে দেখছেন মজার সব খাবার। উদ্যোক্তা-বিক্রেতারা পাচ্ছেন না দম ফেলার ফুরসত।
এমনই চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে হার-ই-ট্রেডের এক্সিবিশনে। অনলাইনে যাত্রা শুরু করা এই ফোরামের এটিই প্রথম অফলাইন প্রদর্শনী। সে কারণেই আয়োজক-উদ্যোক্তাদের উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই।
মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে ৪০ জন নারী উদ্যোক্তার অংশ নিচ্ছেন হার ই-ট্রেডের প্রথম এই অফলাইন এক্সিবিশনে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের মাইডাস সেন্টারে শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী। দেশীয় পণ্যের সমাহার নিয়ে এই প্রদর্শনী চলবে শনিবারও, সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল দশটায় দৈনিক ইত্তেফাক ও অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘৩৬ বছর আগে আমি অনন্যা ম্যাগাজিন শুরু করেছিলাম আজকের এমন নারীদের দেখার জন্যেই। আমি শুরু করেছিলাম আর তোমরা সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছ।’ উদ্বোধন করে তিনি পুরো প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে কেনাকাটাও করেন।
বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় যাত্রা শুরু করে হার ই-ট্রেড। নারী ব্যবসায়ীদের এই নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে ফেসবুককে কেন্দ্র করে। শুরু থেকেই প্রতিমাসে তিন দিনব্যাপী অনলাইন এক্সিবিশন আয়োজন করে আসছে গ্রুপটি। হার ই-ট্রেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট প্রীতি ওয়ারেছা জানান, দেশীয় নারী উদ্যোক্তাদের একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে খোলা হয়েছিল এই গ্রুপ। শুরু থেকে প্রতি মাসে আয়োজিত অনলাইন এক্সিবিশনের সাফল্যের হাত ধরেই বিজয়ের মাসে এই অফলাইন এক্সিবিশনের পরিকল্পনা। উদ্যোক্তা, ক্রেতা, দর্শনার্থীদের উৎফুল্ল উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলা। তিনি বলেন, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উদযাপন করছে হার ই-ট্রেড। এক্সিবিশনের স্লোগান তাই পঞ্চাশের বিজয় সারথি।
জামদানি, খাদি, সিল্ক, সুতি, মসলিন, মনিপুরীসহ দেশীয় পণ্যের সমাহারই মেলার মূল আকর্ষণ। ঐতিহ্যবাহী পণ্যে আধুনিক নকশা ও ডিজাইনে শাড়ি ও পোশাকে বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তুলেছেন উদ্যোক্তারা। আছে শতরঞ্জি, চাদর, গয়নার বাক্স, জামদানি রোলার, হাতে তৈরি গয়না, বৈচিত্র্যময় কনভার্স, মাস্ক, ইন্টেরিয়র সামগ্রীসহ নানা কিছু। একাধিক বিক্রেতা এনেছেন বিভিন্ন দামের জামদানী ও মনিপুরী শাড়ি। অনেকেই আবার মসলিনে জামদানীর নকশায় অ্যাম্ব্রোয়ডারিও করেছেন। ঐতিহ্যবাহী সুতি, তাঁত, খাদি, সিল্ক ও হাফসিল্কে হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি, কুর্তি যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমনি, এসব কাপড় দিয়ে তৈরি জ্যাকেট, কুর্তি, ফতুয়া, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, ব্লাউজসহ নানা আধুনিক পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়।
খাবারেও আছে বৈচিত্র্য। দেশীয় ফুচকা, চটপটি যেমন আছে, তেমনি আছে নানারকম ভিগান খাবার ও মজাদার কেক-পেস্ট্রির আয়োজন। লাস ভিগানস নামক ভিগান খাবারের আয়োজন নিয়ে এসেছেন জেনিফার আরেফীন তিলোত্তমা। চিজকেক, বিরিয়ানি, কাবাব থেকে শুরু করে নানা মজার সব খাবার কিন্তু পুরোটাই প্রাণীজ প্রোটিনে তৈরি। তিলোত্তমা বলেন, প্রাণীর প্রতি ভালবাসা থেকেই এই পেইজের যাত্রা। হার ই-ট্রেড গ্রুপেও ভালো সাড়া পেয়েছেন। অনেকেই অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়েছেন। হার ই-ট্রেডের প্রথম অনলাইন এক্সিবিশনে অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছেন। আগে থেকে পরিচিতরা ছাড়াও অনেক দর্শনার্থীই এসব ভেগান খাবারের স্বাদ নিয়েছেন। ফলে দুপুরের মধ্যেই তার খাবার প্রায় শেষ।
বিক্রেতারা জানালেন, দেশীয় ঐতিহ্য ও নারী উদ্যোক্তাদের এই বৈচিত্র্যময় আয়োজন দেখে তারা আপ্লুত। ধানমন্ডি থেকে আসা সাবরিনা শারমিন বাঁধন জানান, অনলাইনে হার ই-ট্রেডের পণ্য দেখতেন। কেনেনও নিয়মিত। গ্রুপের এই প্রথম অফলাইন এক্সিবিশনে এসে তার দারুণ লাগছে। একসঙ্গে একই ছাদের নিচে এত এত উদ্যোক্তার তৈরি নানারকম দেশীয় পণ্য দেখে তিনি মুগ্ধ ও আনন্দিত। বিজয়ের মাসে এত সুন্দর এক উপহার দেওয়ায় উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
আনঅফিসিয়াল প্যান্ডোরা’র স্বত্বাধিকারী সাম্য সামিয়া বলেন, করোনার পরবর্তী সময়ে এমন এক্সিবিশন অনেকটাই ইতিবাচক। আমরা যারা অনলাইন মাধ্যমে ব্যবসা করি তারা অনেকসময় ক্রেতার কিছুটা অবিশ্বাস পাই। সামনাসামনি দেখা হওয়ায় অনেক ক্রেতা সরাসরি পণ্য দেখে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাদের সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। হার ই-ট্রেডের এই অফলাইন এই এক্সিবিশনের মাধ্যমে বিশ্বাসী রেগুলার ক্রেতাদের সঙ্গে যেমন সামনাসামনি দেখা হচ্ছে তেমনি অনেক নতুন নতুন ক্রেতাও তৈরি হচ্ছেন। ভিড় অনুযায়ী বেচাবিক্রি মোটামুটি বলে জানালেন তিনি।
সারাবাংলা/আরএফ