জনির ‘বাংলাদেশ ৫০’: পর্যটকদের চোখে দেখা বাংলা
১২ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫৭
ঢাকা: ১৮টি গল্প, ১১৬টি ছবি- সবই বাংলাদেশকে নিয়ে। লিখেছেন, ছবি তুলেছেন বাংলাদেশ ভ্রমণে মুগ্ধ ভিনদেশী পর্যটকরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সেই সংকলন নিয়েই প্রকাশিত হয়েছে ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশি এ কে এম শহীদুল ইসলাম জনির ‘থ্রো দ্য লেন্স অব আওয়ার গ্লোবাল ফ্রেন্ডস- বাংলাদেশ ৫০’।
শহীদুল ইসলামের এই প্রয়াস বাংলাদেশকে ভালোবাসেই, পর্যটকদের চোখে বাংলাদেশকে আরও ব্রান্ডিং করতেই। এক সময় ট্যুর গাইড হিসেবে বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে তিনি সারা বাংলাদেশে ভ্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি এবং দেশের মানুষ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারেন। যা তার দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের মানুষ যে খুব সহজ, সরল ও দয়ালু এবং অতিথিপরায়ণ- দেশে ভ্রমণের মাধ্যমেই তা তিনি গভীরভাবে জানতে পারেন। তাই দেশের মানুষ ও বিদশি বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রয়াসেই তার এই বই।
বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি বা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিদেশে বসে কিছু করতেই ডিসেম্বরে বইটি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। রোববার (১২ ডিসেম্বর) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাবেদ আহমেদ। এছাড়া যুক্ত ছিলেন প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব নির্ঝর অধিকারীসহ বইটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বইটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বইটির ভূয়সী প্রসংশা করেন। বইটির উদ্যোক্তা জনির এই উদ্যোগকে সবাই সাধুবাদ জানান।
এ কে এম শহীদুল ইসলাম জনির গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে তার জন্ম। সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করেছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি শহীদুল ইসলাম ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত একটি কোম্পানিতে ট্যুর গাইড হিসাবে কাজ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্যে জার্মানি এবং মিশর যান। জামার্নির ব্রানডেন বার্গ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ইন কটবোস ও মিশরের হেলওয়ান ইউনিভার্সিটি ইন কাইরো থেকে হেরিটেজ কনভার্সেশন অ্যান্ড সাইট ম্যানেজম্যান্টে মাস্টার্স করেছেন।
শহীদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে গিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে আথিতেয়তা গ্রহণ করেছে, তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে এই বইয়ের মাধ্যমে। এখানে ১৩টি দেশের ১৮ জন লেখক রয়েছেন, যারা বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছেন। বইটিতে বাংলাদেশের মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। দেশের গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন কাহিনী এই বইয়ের গল্প এবং ছবিতে সুন্দরভাবে উঠে এসেছে। এতে ১৮ টি ছোট গল্প রয়েছে, যেসব গল্পে বাংলাদেশের সংস্কৃতি-সাহিত্য, ভালো লাগার বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘সংকলক হিসাবে আমি একটি ভূমিকা লিখেছি, যেখানে একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং এরপর ভ্রমণের মাধ্যমে দেশকে জানার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভ্রমণ আমাকে দেশপ্রেমিক এবং একজন বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাই আমি মনে করি, দেশের মানুষদের আরও বেশি বেশি ভ্রমণ করা উচিৎ এবং বিশেষত তরুণদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বইটি তিনটি ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে। সাধারণ বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বইটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দেবে বইটি। যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও ভূমিকা রাখবে।’
বইটি অ্যামাজন কিনডল ডিরেক্ট পাবলিশিং প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে জনি বলেন, ‘রোববার থেকেই বইটি সারা পৃথিবীতে পাওয়া যাবে। সবাই অনলাইন থেকে বইটি কিনতে পারবে। বইটির বিক্রি করে যে মুনাফা হবে তার ৫০ শতাংশ ব্যয় হবে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিকাশে। তাই বইটি কোনোভাবেই মুনাফা নির্ভর নয়।’ বইটি যেহেতু বাংলাদেশিদের নিয়ে লেখা তাই আগামী একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশ করা হবে বলে জানান জনি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম