‘এই সরকার হানাদার বাহিনীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তা প্রমাণ করতে পারবে না’
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৩৫
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে হত্যা করেছিল। সেই সময়ের চিত্রের সঙ্গে আজকের এই চেহারার খুব একটা পার্থক্য নেই। এই সরকার ১৯৭১ সালের হানাদার বাহিনীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তা প্রমাণ করতে পারবে না।’
সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ আমরা শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে। আমরা এ দিবস পালন করছি কেন? স্বাধীনতার ৯ মাসে আমাদের দেশে যত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তার মধ্যে শেষের কয়টা দিনে আমাদের সবচেয়ে মেধাবী মানুষ, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবীদের বেছে বেছে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী তাদের হত্যা করেছিল।
‘কেন হত্যা করা হয়েছিল? একটা জাতি যখন স্বাধীনতা অর্জন করতে চলেছে, নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে চলেছে, সেই সময় তারা (পাকিস্তান হানাদার বাহিনী) ভেবেছে যে, একটা জাতির মেধাবীদের যদি সরিয়ে দেওয়া যায়, যদি শেষ করে দেওয়া যায়, তাহলে এই জাতি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না, এই জাতি ব্যর্থ হবে। কিন্তু তারা (পাকিস্তান) সফল হয়নি। তার দুই দিন পর দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং বাংলাদেশ ৫০ বছর টিকে রয়েছে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু ৫০ বছর পর এসে অবাকে হয়ে আমরা দেখছি আমাদের তরু-যুবকদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হচ্ছে শুধুমাত্র গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার কারণে। আমরা দেখেছি প্রায় দেড়শ সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র কথা বলার কারণে এবং প্রায় সাড়ে চার হাজারের ওপরে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখছি অধ্যাপকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি অনেক ছাত্রকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে তুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য আজকে ৫০ বছরে আমাদের স্বাধীনতাকে সুসংহত করার কথা, আমাদের সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করার কথা, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়ার কথা তখন একটি সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। যাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, আজকে তারা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সমস্ত সন্মানকে ক্ষুন্ন করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করেছে, তাদের ৭ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কারণটা কী? খুব পরিস্কার করে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে, এরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে-বেআইনিভাবে খুন করেছে, হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, বিনা বিচারে হত্যা করেছে, এক্সট্টা জুডিশিয়াল কিলিং হয়েছে। এ্রখানে ৬‘শ উপরে মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, এখানে হাজারের উপরে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আজকে দেশে আইনের শাসন নাই। বিচার ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আমরা দেখলাম, আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলন বা কনভেনশন হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায় নাই। আর সরকার কী বলল? যারা এই সম্মেলন করছে তাদের গণতন্ত্র হলো নরম গণতন্ত্র। আর বাংলাদেশে নাকি খুব শক্তিশালী গণতন্ত্র আছে। শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশগুলোর এই কনভেনশন আহ্বান করে নাই। এভাবে আপনারা দেখবেন মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গত ৫০ বছর বাংলাদেশে যা ঘটছে সব কিছুর একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিনের আহবায়ক আবদুস সালাম, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আমিনুল হক।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ