Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ফাটল ধরাতে তৃতীয় পক্ষের হাত দেখছে ১৪ দল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৫২

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত না দেওয়ার বিষয়টিকে দেশটির ‘ভূরাজনৈতিক হিসাবে-নিকাশের’ প্রতিফলন হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। নেতারা বলছেন, ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরাতে ‘তৃতীয়পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে’ দাবি করে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার এবং বন্ধু দেশগুলোর কাছে সব বিষয়ে ‘সঠিক তথ্য’ তুলে ধরার পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় জোট নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘সারাবিশ্ব যখন জঙ্গিবাদ আলোড়িত একটি বিষয়, সেই সময়ে শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হয়েছে। জঙ্গি নির্মূলে যে সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ অবদান সেই সংস্থাকে আঘাত করা হচ্ছে কেন- আমাদের বোধগম্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘আজকে বঙ্গোপসাগর নিয়ে যে বলয় সৃষ্টি হয়েছে, সেই বলয়ে আমাদের দেশ অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার কারণেই চাপ প্রয়োগ হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। তাদের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ভুল। এটা তাদের জন্যই সম্মানজনক বা নিরপেক্ষ বলে প্রমাণ হবে না।’

পুলিশ ও র‌্যাবের সদস্যরা শুধু দেশের জঙ্গিবাদ নির্মূলেই সফল নয়; বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে আমু বলেন, ‘এখানে তৃতীয় কোনো শক্তি আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে এই দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কোনো প্রয়াস চালাচ্ছে কি না বা তা খতিয়ে দেখা উচিত। যে বাহিনী নারী পাচার ও মাদক চোরচালান রোধসহ জঙ্গিবাদ নির্মূলে ভূমিকা পালন করেছে তাদের বিষয়ে কেন এমন সিদ্ধান্ত? বিষয়টি তলিয়ে দেখা উচিত। তাদের সিদ্ধান্ত বদলানো উচিত।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের সরকারকে পছন্দ না করেন বা তার ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিবর্তন করতে চান, তখন তাদের ওপর বিভিন্ন দোষারোপ করেন। ট্রাম্পের নেতৃত্বে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে গেছে। বাইডেন কিন্তু ঘোষণাই দিয়েছেন যে, সে বিশ্ব নেতৃত্বে ফিরতে চায়। এজন্য বিভিন্ন দেশকে তাদের বলয়ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলেও তারা প্রভাববলয় সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। গণতন্ত্রের সম্মেলনে দাওয়াত না দেওয়া সেই ভূ-রাজনীতির কাজ করেছে।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এই বিজয়ের মাসে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশধিকবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে বৈসাদৃশ্য। সংবিধানের বিধান সমুন্নত রেখেই র‌্যাব আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে থাকে। র‌্যাব-পুলিশসহ সব বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশেও কোনো বাহিনীর কোনো সদস্য বিধান ও আইনের বাইরে গিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটায়, তবে তাকে সাজা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জেহ সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিচারে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে।’

ইনু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রেরর এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের ভেতরে যেসব রাজনৈতিক দল ও মহল হঠাৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখেন তাদের স্বপ্ন স্বপ্ন-ই থেকে যাবে। বিদেশের কোন রাষ্ট্র কী বলল- সেটি দেখে বাংলাদেশের ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ যারা করেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যে শক্তি মানতে পারেনি, সেই শক্তি এই বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আমাদের আঘাতের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে যে বাহিনীটি দেশের আইনশৃঙ্খলা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে তাদের আঘাত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়া হয়েছে।’

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘এ ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। স্বধীন রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক। পররাষ্ট্র মণন্ত্রনালয়ের কিছু করার দরকার ছিল। আমেরিকার অ্যাম্বাসেডরকে ডেকে কৈফিয়ত চাইলাম, এটা কিছু নয়। আমরা এই যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছি। এরকম আরও বিভিন্ন বিষয় আসবে। সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে টার্গেট করা হয়েছে- এটা মাথায় রাখতে হবে।’

এ সময় তিনি ১৪ দলের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমেরিকার কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। একইসঙ্গে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে সরকারকে পরামর্শ দেন নজিবুর বাশার।

সাম্যাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যখন ব্লেকমেল করতে চায়, তখন তারা এভাবে অগ্রসর হয়। এভাবে বিভিন্ন সংকট সৃষ্টি করে সরকার পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। আজকের এটা কিন্তু সেসবের পূর্ব লক্ষণ। তারা সরকারকে পরিবর্তন করতে চায়। তবে এভাবে ব্লেকমেল করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাবু করা যাবে না। উনি যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন তা মোকবিলা করে সামনে এগিয়ে যান। তারা গণতন্ত্রের সম্মেলনে দাওয়াত দেয়নি এটা তাদের ব্যাপার।’

ভার্চুয়াল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন- রেজাউর রশীদ খান, অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার, এজাজ আহম্মেদ মুক্তা, ডা. ওয়াজেদ ইসলাম খান, ডা. শাহাদাত হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

১৪ দল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর