চান্দগাঁওয়ে সম্মেলনে আ.লীগ নেতাদের ‘অবরুদ্ধ’ করে বিক্ষোভ
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদসহ কয়েকজন নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে তাদের পুলিশ প্রহরায় বের করে নেওয়া হয়। হট্টগোলের কারণে সম্মেলন অসমাপ্ত রেখেই বিদায় নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর চান্দগাঁও থানা হাজী কালা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। সেখানে চান্দগাঁও ওয়ার্ডের ক-ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। এছাড়া ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহবায়ক নুর মোহাম্মদ নুরু, যুগ্ম আহবায়ক আইয়ূব খান, নিজাম উদ্দিন ও সাইফুদ্দিন খালেদ এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন। বিকেলে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব নির্বিঘ্নে শেষ হলেও কাউন্সিল পর্বে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন নিয়ে সংকটের সৃষ্টি হয়।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিল পর্বের শুরুতে মোহাম্মদ আজমকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে এতে তেমন কেউ প্রতিবাদ করেননি। আজম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এস এম মাসুদ হোসেন নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর নোমান আল মাহমুদসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাকে সাধারণ সম্পাদক করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। শুরু হয় হট্টগোল। স্কুল প্রাঙ্গনে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। মাসুদ হোসেন নেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
জানতে চাইলে এস এম মাসুদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরম পূরণ করেছি। এবার আবার করেছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আটবছর আগে আমার সদস্য ফরম পূরণের বিষয়টি আমলে না নিয়ে আমাকে নতুন সদস্য হিসেবে গণ্য করেন। তাদের দাবি, একবছর না হওয়ায় আমাকে কোনো পদ দেওয়া যাবে না। এটা শুনে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আসলে ওনারা নাছির ভাইয়ের অনুসারী খোরশেদ আলম নামে একজনকে সাধারণ সম্পাদক করতে চান। সেজন্য নতুন নিয়ম চালু করেছেন যা গঠনতন্ত্রেও নেই। আমরা প্রতিবাদ করলে ওনারা মঞ্চের পেছন দিকে বেরিয়ে স্কুলের একটি কক্ষে বসে থাকেন।’
মাসুদ জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একপর্যায়ে তাদের জানান— সাধারণ সম্পাদক পদে কারও নাম ঘোষণা করা হবে না। আ জ ম নাছির উদ্দীন ইউনিটের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। সেখানে সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ বক্তব্য শুনে নেতাকর্মীরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেন। স্কুলকক্ষের ভেতরে কার্যত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতাদের বের করে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে চান্দগাঁও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আইয়ূব খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। সেটা আমরা ঘোষণা করিনি। পরে নাছির ভাইয়ের (আ জ ম নাছির উদ্দীন) সঙ্গে কথা বলে ঘোষণা করা হবে। তবে সভাপতি আমরা নির্বাচন করেছি। সাধারণ সম্পাদক পদের যে প্রার্থীর জন্য সমস্যা হয়েছে, তাকে ঘোষণা করা হলে গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় হত।’
অবরুদ্ধ করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চান্দগাঁওয়ে এমন সাহস কারও নেই যে, আমাদের আটকাতে পারে। আমরা সিনিয়র লিডারদের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্কুলের একটি রুমে গিয়ে বসেছিলাম। বাইরে কি হয়েছে সেটা আমরা জানি না।’
জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুপুর থেকে সম্মেলনস্থলে ছিলাম। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। শুধু সভাপতি পদে নাম ঘোষণার পর সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। পরে নেতারা সেই পদে কারও নাম ঘোষণা না করে চলে যান। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এনএস