Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ছাত্রলীগের বাধায়’ সিটে উঠতে পারছেন না ঢাবির শতাধিক শিক্ষার্থী!

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৪১

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেও বরাদ্দকৃত সিটে উঠতে পারছেন না প্রথম বর্ষের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা সিটে উঠতে দিচ্ছেন না।

জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর হলের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৩০৭ জন শিক্ষার্থী সিট বরাদ্দ পান। এদের মধ্যে প্রথম বর্ষের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। টাকা পরিশোধ করেও ছাত্রলীগের বাধায় প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থীদের কেউই বরাদ্দ পাওয়া সিটে উঠতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিস্টে নাম দেখেছি। রুম নম্বর, সিট নম্বরও উল্লেখ করা ছিল। আমরা টাকাও জমা দিয়েছি। কিন্তু সিটে উঠতে পারছি না। ছাত্রলীগের ভাইয়ারা বলেছে, তারা নাকি আমাদের সিট দিয়েছেন! ‘সময় হলে’ তারাই সিটে উঠতে দেবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোতে ছাত্রলীগের একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও ২০১৫ সালে উদ্বোধনের পর থেকে সর্বশেষ সিট বরাদ্দের আগ পর্যন্ত বিজয় একাত্তর হলে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিকভাবে সিট বণ্টনের রেওয়াজ ছিল।

অভিযোগ রয়েছে, ‘গণরুম খালি করে দেওয়ার’ শর্তে হল শাখা ছাত্রলীগে আসন্ন কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের দেওয়া ‘লিস্ট’ অনুযায়ী সর্বশেষ সিট বরাদ্দ দিয়েছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির। বিষয়টিকে পুঁজি করে হল শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিটে উঠতে দিচ্ছেন না। নেতারা নাকি বলছেন, হল শাখা ছাত্রলীগ তাদের সিট দিয়েছে এবং ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া সাপেক্ষে তারা সিটে উঠতে পারবেন। ফলে বৈধ সিট পাওয়ার পরও গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হলটিতে কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতাকে কেন্দ্র করে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন অন্তত নয় জন। এদের সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিভিন্ন পদধারী নেতা।

একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘প্রোটোকল’ হিসেবে ব্যবহার করেন ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাকর্মীরা। সপ্তাহে কয়েকদিন, ক্ষেত্রবিশেষে প্রত্যেকদিন হল থেকে জোরপূর্বক প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সংস্কৃতির নাম ‘প্রোগ্রাম’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গণরুমে প্রথমবর্ষের সবাই একসঙ্গে থাকি। সিটে উঠে গেলে প্রথম বর্ষের সবাই বিভিন্ন রুমে আলাদা হয়ে যাব। তখন আমাদের দিয়ে ‘প্রোগ্রাম’ করাতে পারবে না। মূলত এই কারণেই সিটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না আমাদের।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন হল কমিটির পদপ্রত্যাশী সজীবুর রহমান সজীব সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের সিটে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী। সদ্য মাস্টার্স শেষ হয়েছে তাদের। তাই আমরা হল প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে মানবিক কারণে তাদের কিছুটা সময় দিয়েছি।’

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী এই নেতার দাবি, ভিন্ন মতাদর্শীরা জলঘোলা করতে চাইছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী পদপ্রত্যাশী হারুন রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাদের কেউ বাধা দেয়নি। বুঝিয়ে-শুনিয়ে এই মাসটা অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। হলের দ্বিতীয় বর্ষের কিছু শিক্ষার্থীও সিট পায়নি। সব মিলিয়ে আমরা প্রভোস্ট স্যারকে বলেছি। আশা করি জানুয়ারি মাসে সবাই সিটে উঠে যেতে পারবে।’

হল শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান নিশান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। মানবিক কারণে ওইসব সিটে থাকা শিক্ষার্থীদের কিছু দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সেজন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সিটে উঠতে একটু দেরি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু শুনিনি। খোঁজ-খবর নিতে হবে।’

এদিকে সার্বিক বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী এ বিষয়ে আমাকে এখনো অভিযোগ করেনি। কাল আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাধা বিজয় একাত্তর হল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর