বাংলাদেশে পানি নিরাপত্তা জোরদারে একজোট ইউনিসেফ ও সুইডেন
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৩৬
ঢাকা: ইউনিসেফকে সুইডেন সরকারের দেওয়া ৪০ লাখ ডলারের নতুন সহায়তায় বাংলাদেশের শিশুরা উপকৃত হবে। এর মধ্যে একটি অনুদান শিশু, নারী ও কমিউনিটিগুলোর জন্য পানির নিরাপত্তা, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধির উন্নয়নে ব্যয় হবে এবং দ্বিতীয়টি কিশোর-কিশোরীদের, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নের দিকে মনোনিবেশ করবে।
যদিও বাংলাদেশ খাবার পানির মানোন্নয়ন ও আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকি দূর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা সত্ত্বেও এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি, মৌলিক শৌচাগার এবং ভালো স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের সুযোগ নিশ্চিত করা, যেন সব শিশু উন্নতি লাভ এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবন শুরু করতে পারে।
এর আগে সুইডেনের সহায়তায় ইউনিসেফ আর্সেনিকমুক্ত পানি ব্যবস্থার জন্য ব্যবহারিক ও উদ্ভাবনী মডেল তৈরি করেছে। বাংলাদেশ সরকার এখন নিজস্ব বাজেট থেকে পানি আর্সেনিকমুক্ত করার উপকরণে ২৪ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ওই মডেলের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। এটি আর্সেনিক দূষণে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা গ্রামীণ এলাকায় ২ কোটি মানুষের জন্য পানির নিরাপত্তা বাড়াবে, যাদের মধ্যে ৫৪ লাখ শিশু। সুইডেনের নতুন ২০ লাখ ডলার আর্থিক সাহায্য একটি বৃহত্তর সহায়তার সেতুবন্ধনের নিদর্শন। এটি কারিগরি সহায়তা প্রদানে ইউনিসেফকে সক্ষম করে তুলবে, যা নতুন ব্যবস্থাগুলোর ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার মানদণ্ড বজায় রাখা নিশ্চিত করবে।
আর্সেনিক একটি প্রাকৃতিক ধাতব উপাদান, যা ভূগর্ভস্থ কিছু পানিতে পাওয়া যায়। এটি ত্বকের ক্ষত, ক্যান্সার এবং শিশুদের বিকাশ ও মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর্সেনিকের সমস্যা মোকাবিলায় প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে গভীর কূপ খনন করা এবং মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত ভূগর্ভস্থ পানির বদলে বৃষ্টির পানি ও পরিশোধিত ভূ-উপরিতলের পানির মতো অন্যান্য উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা।
গত চার বছরে অংশীদারদের সঙ্গে ইউনিসেফের কার্যক্রমের মাধ্যমে এবং সুইডেন সরকারের সহায়তায় স্থাপিত ২,৫০০টি নতুন নিরাপদ পানির পয়েন্ট থেকে এখন ৩ লাখের বেশি মানুষ সেবা পাচ্ছে এবং প্রায় ৫ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা ও উন্নত শৌচাগার থেকে উপকৃত হয়েছে। এছাড়া ২৬১টি গ্রামকে আর্সেনিকের দূষণ থেকে নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউনিসেফকে সুইডেন সরকারের দেওয়া ২০ লাখ ডলারের অতিরিক্ত দ্বিতীয় অনুদান বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালীর সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা ও জীবনমুখী দক্ষতার উন্নয়নে গৃহীত একটি বৃহৎ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে যৌনতা বিষয়ক বিস্তৃত শিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা। এটি কিশোর-কিশোরীদের তাদের কমিউনিটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করবে।
“কিশোর-কিশোরীদের পেছনে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আমরা তাদের নিজেদের, তাদের পরিবার ও কমিউনিটির জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সক্ষমতা জোরদার করি”- বলেন শেলডন ইয়েট।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে বলেন, কিশোর-কিশোরীদের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (এসআরএইচআর) উন্নয়নে ইউনিসেফ বাংলাদেশকে তার স্বাধীনতার পর থেকেই সহায়তা দিয়ে আসছে সুইডেন। এসআরএইচআর নিশ্চিত করা গেলে তা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে। দরিদ্র এবং ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা সম্প্রসারণে অবদান রাখতে পেরেও আনন্দিত সুইডেন। নারী, শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতার কেন্দ্রে রয়েছে।
ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সুইডেন দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্তদের জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে বস্তিবাসীদের জন্য নগর-স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, কিশোর-কিশোরীদের এসআরএইচআর ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও আর্সেনিক দূষণ দূর করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশে সুইডেন ইউনিসেফকে প্রায় ২৯ কোটি ২০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (৩ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার) সহায়তা দিয়েছে। গোটা বিশ্বের বিবেচনায়, সুইডেন ইউনিসেফের ষষ্ঠ বৃহত্তম দাতা।