ফের মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন
১৪ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:০৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ফের পরিবর্তন হয়েছে। এবার মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।
শুরু থেকে চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পালন করা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বদলি হয়ে গত ১৮ নভেম্বর সিএমপিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি খুলশী থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পরিবর্তে গত ২২ নভেম্বর পিবিআইয়ের আরেক পরিদর্শক একেএম মহিউদ্দিন সেলিমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দায়িত্ব পাবার ১৫ দিনের মাথায় তিনি পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার হন।
পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহিউদ্দিন সেলিম পদোন্নতি পাওয়া পরিদর্শক পদ মর্যাদার আরেকজনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।’
২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। শুরু থেকেই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা মামলা তদন্ত করে আসছিলেন। মামলাটির তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতিও এসেছে পিবিআইয়ের হাত ধরে। মিতু হত্যার ঘটনায় দু’টি মামলা এখন তদন্তাধীন আছে। এর মধ্যে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার যে মামলাটি করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে সেটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা পৃথক মামলারও তদন্ত চলছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১৬ সালের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানাভাবে স্ত্রী খুনে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার আলোচনা শুরু হয়। ঘটনার পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ্যে আনেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।
চলতি বছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।
আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দাখিলের পর গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।
ওইদিনই (১২ মে) বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এদিকে গত ১৪ অক্টোবর কারাবন্দি বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দাখিল করেন। ২৭ অক্টোবর ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয় বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে। আদালত বাবুলের নারাজি আবেদন নামঞ্জুর করেন। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম