Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্বশুরবাড়ির অবিশ্বাসের বলি ইলমা— অভিযোগ স্বজন-সহপাঠীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:১১

স্বামীর সঙ্গে ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা

ঢাকা: ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৬) মরদেহ। তার মরদেহের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে জখমের চিহ্ন। ইলমার পরিবারসহ সহপাঠী-স্বজনদের অভিযোগ তাকে হত্যা করা হয়েছে।

কারণ হিসেবে ইলমার সহপাঠী-স্বজনরা বলছেন, ইলমাকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রচণ্ড অবিশ্বাস করত। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। এমনকি সে শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি পরীক্ষা দিতে আসার সময় সঙ্গে রীতিমতো এক জন ‘বডিগার্ড’ও পাঠানো হয়েছিল!

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ ইলমার মরদেহ নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে। ইলমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করলেও পরিবারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বনানী থানায় হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের হত্যা মামলার আবেদন

মাত্র মাস ছয়েক আগে কানাডা প্রবাসী ইফতেখারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ইলমার। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়ি থাকতেন ইলমা। আজ তার মরদেহ ঢামেক মর্গে। সেখানে উপস্থিত সহপাঠীরা বলছেন, শ্বশুরবাড়ি থেকে ইলমার ওপর ছিল কড়া নজরদারি। ইলমার এক জন শিক্ষকও একই কথা বলছেন।

ইলমার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ঢামেক মর্গে ছুটে আসেন তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা। ইলমার সহপাঠী জান্নাতুল ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, বিয়ের আগ পর্যন্ত বেগম সুফিয়া কামাল হলে থাকত ইলমা। বিয়ের পর থেকে বনানী শ্বশুরবাড়িতে থাকত। গত সেপ্টেম্বরে শেষ দেখা হয় ইলমার সঙ্গে। একটি পরীক্ষা দিতে এসেছিল। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

জান্নাতুল আরও বলেন, আমরা শুনেছি ইলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না ওকে। সবসময় সন্দেহ করতো ওকে। এমনকি ওর মোবাইল নম্বরে কল দিলেও শাশুড়ি কল রিসিভ করত। আমরা ওর শরীরের আঘাতগুলো দেখেছি। ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলেছে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ইলমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। ওকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ইলমার আরেক সহপাঠী মর্জিনা নাসরিন মুমু বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়েছিলাম। ইলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। এগুলো স্বাভাবিক না। তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। ইলমার পরিবারের লোকজনও তেমনটি বলেছেন।

মাস ছয়েক আগে ইফতেখারের সঙ্গে বিয়ে হয় ইলমার

ইলমার আরেক সহপাঠী আশিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, শেষ একটা ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিতে ইলমা ক্যাম্পাসে এসেছিল কিছুদিন আগে। ওই সময় যতক্ষণ ক্যাম্পাসে ছিল, ততক্ষণ তাকে ভিডিও কলে থাকতে বাধ্য করেছে তার স্বামী। এ ছাড়া ‘গার্ড’ হিসেবে একটা মেয়েকে পাঠানো হয়েছিলো ওর সঙ্গে। সেদিন ইলমা বারবার কথা বলতে চাইছিল আমাদের সঙ্গে, কিন্তু বলতেই পারছিল না।

ইলমার শিক্ষক ঢাবি নৃত্যকলা বিভাগের প্রভাষক তামান্না রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ইলমার শরীরের আঘাত দেখেছি। এটাকে কোনোভাবেই আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না। আমি শুনেছি, ইলমা যখন গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিল, তখন ওর সঙ্গে একজন বডিগার্ড ছিল। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কতটা অবিশ্বাস ও সন্দেহ করতে তাকে!

ইলমার পরিবারের সদস্যরাও ইলমাকে হত্যার অভিযোগই তুলছেন। ইলমার খালু ইকবাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমার ভাগ্নিকে ওর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলেছে। আমরা এর বিচার দাবি করছি। ইলমার শরীরে আমরা অনেক আঘাত দেখতে পেয়েছি। গলাতেও আঘাত দেখেছি। ইলমা আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ইলমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে। বনানী থানা পুলিশ আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইলমার স্বামী ইফতেখারকে তাদের হেফাজতে রেখেছে। এ ঘটনায় ইলমার পরিবার হত্যা মামলাও দায়েরের আবেদন করেছে বনানী থানায়।

জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তে তার মৃত্যুর কারণ বেরিয়ে আসবে। আমরা তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

পরিবারের হত্যা মামলার আবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, তারা মামলার আবেদন করেছেন। মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সারাবাংলা/এসএসআর/আরআইআর/টিআর

ইলমা চৌধুরী মেঘলা ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর