ময়নাতদন্ত শেষ, ইলমার মরদেহ গেল ধামরাইয়ে
১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৫৮
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৬) মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি ধামরাইয়ের পাঠানটুলা এলাকায় নিয়ে গেছেন স্বজনরা।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে ইলমার মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। পরে ইলমার মরদেহ বুঝে নেন তার চাচা গোলম মোহাম্মদ চৌধুরী।
ঢামেক মর্গ সূত্র জানায়, মরদেহের গলা থেকে টিস্যু ও ভিসেরাসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন-
- ইলমা হত্যা মামলায় স্বামীর ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
- ঢাবি শিক্ষার্থী ইলমা হত্যা মামলায় স্বামী ইফতেখার রিমান্ডে
- ঢাবি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের হত্যা মামলার আবেদন
- শ্বশুরবাড়ির অবিশ্বাসের বলি ইলমা— অভিযোগ স্বজন-সহপাঠীদের
মর্গে ইলমার চাচা গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, কানাডা প্রবাসী ইফতেখারের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম হয় ইলমার। পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের তিন-চার মাস পর ইফতেখার কানাডা চলে যায়। এরপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন ইলমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে।
ইলমার চাচা আরও বলেন, ইলমার বয়ফ্রেন্ড আছে, তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা করে— এই সন্দেহে তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালায় ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দিত না। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও না। বিদেশ থেকেই হুমকি দিত, দেশে আসার পর তাকে শিক্ষা দেবে।
শ্বশুরবাড়ি থেকে ইলমার আত্মহত্যার তথ্য জানানো হয়েছিল জানিয়ে গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, শুনলাম ইলমার স্বামী ছয় দিন আগে দেশে এসেছে। গতকাল (মঙ্গলবার) ইলমার মাকে ফোন করেছে ইফতেখার (ইলমার স্বামী)। জানায়, ইলমা রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। তাকে দরজা ভেঙে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে স্বজনরা সবাই হাসপাতালে গিয়ে ইলমাকে মৃত দেখতে পায়।
গোলাম মোহাম্মদের অভিযোগ, ইলমা কিছুতেই আত্মহত্যা করতে পারে না। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্বামী তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা ইলমাকে হত্যার বিচার চাই।
এর আগে, ইলমার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলসানারা বানু উল্লেখ করেন, মরদেহের ওপরের ঠোঁটে কালচে জখম, নাকে আঘাতের চিহ্ন ও শিরায় কালচে জখম রয়েছে। এছাড়া ঘাড়ে লম্বালম্বি কালচে জখম, গলার ওপরের দিকে থুতনিতে কালচে জখম, পিঠের ডান পাশে কালচে জখম ও রক্ত জমাট ও বাম পায়ের বুড়ো আঙুলে জখম রয়েছে।
সুরতহাল প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই পায়ের হাঁটুর নিচেও কালচে জখমের চিহ্ন আছে। ডান ও বাম হাতের আঙুলেও কাটাছেঁড়া ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ওই বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা একটি ওড়না আলামত হিসেবে উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহালে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ইলমার মরদেহটি উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। পরে সেটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবারই মর্গে উপস্থিত ইলমার স্বজন ও সহপাঠীরা অভিযোগ করে বলেন, ইলমাকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন সন্দেহ করতেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে সবশেষ একটি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ইলমা। ওই সময় সার্বক্ষণিক ইলমাকে ভিডিও কলে থাকতে হয়েছিল এবং তার সঙ্গে একটি মেয়েকে ‘বডিগার্ড’ হিসেবেও পাঠানো হয়েছিল শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে।
ইলমার সহপাঠী ও স্বজনরা আরও বলছেন, ইলমাকে বিয়ে করার আগে ইফতেখার আরেকটি বিয়ে করেছিল। সেই সংসারে তার একটি সন্তানও রয়েছে। ইলমাকে ইফতেখার ও তার পরিবারের লোকজনই নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় ইলমার বাবা বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আগে থেকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে রাখা ইফতেখারকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছে বনানী থানা পুলিশ। পরে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর