Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরাস্ত করতে পারবে না— মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে হানিফ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:০৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রযাত্রার পথে থাকা বাংলাদেশকে কেউ পরাস্ত করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলরা খুশিতে বাকুম বাকুম শুরু করে দিয়েছেন। ভাবছেন, এবার বোধহয় সরকার চলে যাচ্ছে। স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই— খুশি হয়ে লাভ নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবই, কোনো অপশক্তি আমাদের পরাস্ত করতে পারবে না।’

বিজ্ঞাপন

প্রয়াত রাজনীতিক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘হঠাৎ করে আমেরিকা আমাদের দু’টি সংগঠনের প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমরা অবাক হলাম। অভিযোগ, তারা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। র‌্যাবের প্রধান ছিলেন বেনজীর সাহেব। তার নির্দেশে নাকি ক্রসফায়ারে মানুষ মারা গেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। এখন যিনি র‌্যাবের ডিজি, উনার নির্দেশেও নাকি ক্রসফায়ারে মানুষ মারা গেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।’

‘২০০৫ সালের ৫ জুন র‌্যাবের সেই সময়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছিলেন— ক্রসফায়ার আছে, বাংলাদেশে এটা প্রয়োজন। এটার কোনো বিকল্প নেই, এটা চলবে। আমার জিজ্ঞাসা— সেই ফজলুল বারী এখন কোথায়? সে কী করে এখন আমেরিকার মতো জায়গায় থাকতে পারে? প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারের পক্ষে কথা বলে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল, সেই ফজলুল বারী এখন কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারে? এক যাত্রায় দুই রকম ফল কেন?,’— প্রশ্ন রাখেন হানিফ।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের আমেরিকায় আশ্রয় দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকারদের দোসর ছিল, বিশেষ করে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল দু’জন— চৌধুরী মাঈনুদ্দিন লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। কী করে খুনিদের আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন? বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, আদালতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে— সেই মেজর নূরকে কী করে আপনারা রাষ্ট্রীয় আশ্রয়ে সেখানে রেখেছেন? এই নিষেধাজ্ঞা আসলে এক গভীর ষড়যন্ত্রের, চক্রান্তের অংশ বলেই অনেকে মনে করছে।’

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সবসময় ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে যখন স্বাধিকারের আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তখনো ষড়যন্ত্র ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো তখনও বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল।’

তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেবরা ইতিহাস আবার নতুন করে লিখেছেন। কয়েকদিন আগে বললেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মা এবং প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। আমি তো ঘাবড়ে গেলাম যে ঠিক শুনলাম কি না। বেগম খালেদা জিয়া কী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ছিল? ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ হচ্ছিল, সে সময় বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় ঢাকায় ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। উনাকে সেসময় অনেকে নিউমার্কেট এলাকায় শপিং করতে দেখেছে। তাকে হঠাৎ করে এখন মুক্তিযোদ্ধা আখ্যায়িত করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করার চেষ্টা করছে। আবার বললেন, তারেক রহমান নাকি শিশু মুক্তিযোদ্ধা। অবাক হয়ে যাই। মানুষের মিথ্যাচারের তো একটা সীমা আছে।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার দাবি প্রসঙ্গে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘কোন যুক্তিতে, কোন আইনের বলে আপনারা বিদেশে পাঠাতে চাচ্ছেন? আবার বলছে, আমাদের সরকার নাকি মানবিক না। আদালত দণ্ড দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়াকে। জেলখানায় তিনি যখন গেলেন, তখন বললেন উনার চলাচলে অসুবিধা, একজন পরিচারিকা যেন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে একজন পরিচারিকা রাখতে দেওয়া হলো। এর চেয়ে আর কী মানবিকতা চান? এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতাবলে বাসায় থাকার সুযোগ করে এর চেয়ে বড় মানবিকতা কী আশা করতে পারেন। এর চেয়ে মানবিকতা দেখানোর সুযোগটা কোথায়।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কি মানবিকতা দেখিয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেই হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরষ্কৃত করেছিলেন। হত্যার বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হঠাৎ করে কেক কেটে মিথ্যা জন্মদিন ঘোষণা করলেন ১৫ আগস্ট। তার কতগুলো জন্মদিন? মানবতার কথা বলার আগে আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত। নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে আবার সরকারকে হুমকি-ধমকি দেন। এটা ভাবার কারণ নেই যে আওয়ামী লীগ এত দুর্বল সংগঠন। এটা ভাববেন না, আপনাদের আন্দোলন ও হুমকিতে সরকার পতন হয়ে যাবে।’

প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে গণমানুষের নেতা উল্লেখ করে হানিফ বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাইয়ের কাছে গরীব-দুঃখী, কুলি, কামার, মুচি— কারও কোনো ভেদাভেদ ছিল না। সবাইকে তিনি আপন করে দেখতেন। মহিউদ্দিন ভাইয়ের আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল আমাদের কাছে প্রেরণার উৎস। মহিউদ্দিন ভাইকে শুধু আজ চট্টগ্রামবাসীই স্মরণ করছেন তা নয়, দেশের অনেক জায়গার মানুষই স্মরণ করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশকে গত ১৩ বছর ধরে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেই সময় যখন দেখি কেউ কেউ আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে, তখন মহিউদ্দিন ভাইয়ের কথা বারবার মনে পড়ে।’

স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিউদ্দিনের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করে একটা নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। সেখানে কিন্তু তদবিরের বৈধ ব্যবসা আছে, পয়সা দিয়ে তদবির করানো যায়। সেই সুযোগ ব্যবহার করে লবিং করে আমাদের দেশের কিছু তথাকথিত সুশীল সমাজ এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে আমাদের র‌্যাবকে টার্গেট করে র‌্যাবের প্রধানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীরা মার্কিন প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল। এর একটা ফল তারা এখন পাচ্ছে।’

চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সংগঠনকে মজবুত করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কঠিন সময় আসছে। এই সময় আমাদের সংগঠনের ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। সংগঠনে কর্মী বাড়াতে হবে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন ধরে মূল দলে জায়গা পাচ্ছে না। তাদের মূল দলে জায়গা করে দিতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠনের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা দলের মধ্যে থাকবে। মহিউদ্দিন চৌধুরী যখন বেঁচে ছিলেন তখনও দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা না থাকলে সাংগঠনিক কার্যক্রম বেগবান হয় না।’

নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কখনো রাজপথ ছাড়েননি, আমরাও রাজপথ ছাড়ব না। যেকোনো কঠিন সময় আমরা রাজপথে থেকেই মোকাবিলা করব।’

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগরের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলার সহসভাপতি এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মার্কিন নিষেধাজ্ঞা র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর