Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী: লাল-সবুজের উৎসবে চট্টগ্রাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৩৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দুই দশকের সংগ্রামের পথ বেয়ে যে দিনটিতে বাঙালি মুক্তি পেয়েছিল, যে দিনটিতে বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা, ৫০ বছর আগের সেই গৌরবের দিনটিতে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। ৯ মাসের যুদ্ধদিনে প্রাণ হারানো সকল শহীদদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে চট্টগ্রামের আপামর মানুষ। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, কুচকাওয়াজ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনে চলছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসা শুরু করে। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে শহীদ মিনারে জমায়েত কম থাকলেও এবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ব্যাপক জমায়েত হয়। বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিজয়ের ৫০ বছরে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেছেন তারা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বার্তা দিয়ে প্রথম সূর্যোদয়ের পর চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট হিলে ৩১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। সকাল ৮টায় নগর পুলিশের একটি চৌকস দলের ‘গার্ড অব অনারের’ মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সকল সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া বর্ণিল আলোকসজ্জাও করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি ভবনে।

পুলিশ র‍্যাবের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে চলে শ্রদ্ধা জানানো। সকালে শহীদ বেদীতে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দেন।

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এরপর নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লাল পতাকা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সকালে নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করে। সেই শোভাযাত্রা নিয়ে তারা শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। নগর বিএনপির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এই কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। উদীচী, বোধন, প্রমা, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠনও শ্রদ্ধা জানায়। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে বেলা গড়াতেই ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহীদ মিনার। শ্রদ্ধা জানানোর পুরো সময় মিছিল-শ্লোগানে মুখর ছিল শহীদ মিনার এলাকা।

এদিকে চসিকের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর নগরীর টাইগারপাসে অস্থায়ী কার্যালয় প্রাঙ্গনে স্থাপিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। নগরীর চকবাজারে প্যারেড মাঠে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কুচকাওয়াজের পর মেয়র শিক্ষার্থীদের সালাম গ্রহণ করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। এতে নগরীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সিএমপি কমিশনার, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক এসময় সালাম গ্রহণ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শারীরিক কসরত প্রদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় একইস্থানে শপথবাক্য পাঠের আয়োজন করা হয়েছে। এতে চার হাজারেরও বেশি মানুষের জমায়েতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শপথবাক্য পাঠ করাবেন।

উদীচী চট্টগ্রামের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরীর চেরাগি চত্বরে চলছে ‘মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র’ প্রদর্শনী। বিকেলে সেখানে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মঞ্চে পরিবেশন করা হবে গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান। সকালে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ প্রাঙ্গন থেকে সাইকেল শোভাযাত্রা বের করে ‘সাইকেল কমিউনিটি’ নামে একটি সংগঠন। গায়ে লাল-সবুজের পতাকা জড়িয়ে এই শোভাযাত্রায় হাজারো তরুণ-তরুণী অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও বের হয়েছে বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালি। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মুখস্থ চত্বর থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় বিজয় র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিতে নগর ও জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, মেরিন একাডেমিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণ ছিল। দেশাত্মবোধক গান ও বাদ্যের তালে এগিয়ে যাওয়া র‌্যালিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন। র‌্যালির সামনে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিকৃতি।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

লাল-সবুজের উৎসবে চট্টগ্রাম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর