Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তারুণ্যের চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:১২

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট: আজ ১৬ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। পঞ্চাশ পেরিয়ে একান্নতে পা রেখেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

মুক্তির মহারণে তারুণ্যের অংশগ্রহণও ছিল, ছিল হুংকার, ছিল রুখে দেওয়ার অদম্য সাহস। আজও সর্বৈব সত্য— তরুণরাই গড়ে দিতে পারে নতুন ইতিহাস। বিজয়ের এই মহালগ্নে মুক্তিযুদ্ধ, বিজয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কী ভাবছেন, তা জানতে চেষ্টা করেছে সারাবাংলা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অর্থী নবনীতা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিকড়। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ যে পর্যায়ে এসে দেশ নিয়ে এত কথা বলতে পারছি, দেশের উন্নয়ন সচক্ষে দেখতে পারছি- এর সূতিকাগার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং সেই চেতনা। তবে এই চেতনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কমে এসেছে। এখনো কমছে। এটা আমাদের কাম্য নয়। তরুণ প্রজন্মকে বেড়ে ওঠার পাশাপাশি তাদের অবশ্যই জানতে হবে এদেশের মানুষের ইতিহাস। তার পূর্বপুরুষের কথা।’

অর্থী বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশে দুর্নীতির যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে এর মাঝে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঠিকভাবে ছড়াচ্ছে না। ফলে দিন দিন তরুণরা এই চেতনার জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের চর্চা আর তাকে ধারণ করা আবশ্যক।’

ধর্মের জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে— সে প্রসঙ্গ টেনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসীর মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনে যেসব সংগ্রাম পৃথিবীর ইতিহাসে হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই শ্রেণিবৈষম্যের ব্যাপারটি দৃষ্টিগোচর হয়; বিশেষত ধর্মীয় চিন্তায়। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামেও ব্যাপারটি বর্তমান। ধর্মের সঙ্গে একাত্তরের সংগ্রামের মিল-অমিলের বিষয়টি আজ পর্যন্ত তরুণ সমাজের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর দায় কিছুটা ধর্মীয় নেতাদের, আর বেশিরভাগই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের। বিষয়টি খোলাসা করলে দেশের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফফাত খন্দকার ইরার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে একতা-ঐক্য। তিনি মনে করেন, ‘এই একতা এখনো আমাদের মাঝে বিরাজমান।’ ইরা বলেন, “আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে ‘একতা’। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়েছিল বলেই মুক্তি অর্জন সম্ভব হয়েছে। বর্তমান একদল স্বার্থান্বেষী জাতিতে জাতিতে দাঙ্গা-কলহ তৈরি করতে চায়- এটা সত্য। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেই একতা আজও বাংলাদেশে বিরাজমান।’

ইরা বলেন, ‘আমি একজন বাংলাদেশি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তেমনি আমার আশেপাশে আমার বন্ধু-বান্ধবের মাঝেও আমি এই বিষয়টি দেখতে পাই। আমি আশাবাদী, আমি এবং আমার বয়সী প্রত্যেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে যাবে। এবং একদিন বঙ্গবন্ধু ও আমাদের সবার সোনার বাংলার স্বপ্ন সত্য হবে।’

চট্টগ্রাম কলেজের পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোরশেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ— রক্তের সিঁড়ি বেয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে যে নামটি আমরা সগৌরবে লিখেছি। আমরা এই প্রজন্মের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ না দেখলেও; শুনেছি, জেনেছি বিজয়ের আত্মকথা। মুক্তিযুদ্ধের মূলবাণী আমার কাছে- দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হওয়া অর্থ্যাৎ সর্বাঙ্গে দেশপ্রেম। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে এসে দেখি, এখানে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চর্চা-ই বেশি। গণতন্ত্র তথা মানুষের সুষ্ঠু ভোটাধিকারের অভাব লক্ষণীয়। দুর্নীতির মহড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নাগরিকের জীবনযাত্রার মান হ্রাস। নাগরিক যেখানে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা সর্বাঙ্গে দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ!’

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন শান্ত বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতি ও একটি ভূ-খণ্ডের মুক্তির সূচনা। তবে ভূ-খণ্ড এবং জাতি আক্ষরিক অর্থে মুক্তি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু সত্যিকারের মুক্তি মিলেনি এখনও। সত্যিকারের মুক্তি মিলবে তখনই, যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক বাস্তবায়ন হবে বাংলাদেশে। বিজয়ের এই ক্ষণে এই প্রত্যাশাই থাকল।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ দিগন্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযু্দ্ধ— যার মাধ্যমে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ভূ-খণ্ড। দেশের সবস্তরের মানুষের উচিত মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে ধারণ করা। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে সামনে নিয়ে দেশের জন্য কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। দেশকে ভালো রাখলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফুটন্ত থাকবে। তবে বর্তমানে সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভাব রয়েছে। মুক্তিযু্দ্ধের মতো পবিত্র জিনিস নিয়ে চলছে চেতনা ব্যবসা। চেতনা দেখিয়ে ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে ক্ষমতা।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নিবরাজ মাহমুদ আনিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ আমরা তরুণ প্রজন্ম সরাসরি না দেখলেও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন তথ্য, চিত্র, দলিল থেকে দেশের সূর্য সন্তান, মা, বোনসহ সর্বস্তরের মানুষের আত্নত্যাগের কথা জানতে পারি। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা যে মহান ব্যক্তির তর্জনীর ইশারায়, যার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত বাঙালি জাতি সেই মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানও তরুণ প্রজন্মের কাছে দেশসেবার ব্রত তৈরি করে। তার চেতনার মধ্য দিয়ে মুক্তি সংগ্রামের একটা স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজাকার বাহিনী যেভাবে সেই সময়ে দেশের বিরোধিতা করেছে তাদের অনুসারীরা আজও মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টায় লিপ্ত। ফলে বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চিন্তা-চেতনা ও চর্চার ধারা তরুণ প্রজন্মের কাছে কিছুটা কম।’ সঠিক ইতিহাস যত চর্চা করা যাবে ততই মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যাবে বলে মনে করেন নিবরাজ।

সারাবাংলা/আরআইআর/পিটিএম

তরুণ বিজয়ের ৫০ বছর মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর