ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সোনার বাংলা গড়বোই— শোভাযাত্রায় শপথ আ.লীগের
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৫৭
ঢাকা: রাজনৈতিকভাবে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। নেতারা বলেছেন, সমস্ত অপশক্তি আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে যাব- এটাই হোক আমাদের শপথ।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঐতিহাসিক ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ পূর্ব সমাবেশ থেকে নেতারা এমন দৃঢ় প্রত্যয় ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন দলের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।
বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রাটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, এলিফ্যাট রোড এবং মিরপুর রোড হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত বাসভবন ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। কর্মসূচিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযাগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বিজয় শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য, উৎসবমুখর করতে দলের নেতাকর্মীরা বাদ্য-বাজনা, ব্যান্ড পার্টির তালে তালে আনন্দমুখর পরিবেশে লাল-সবুজের ছোট ছোট পতাকা, ফেস্টুন ব্যানার হাতে অংশ নেয়।
শোভাযাত্রা সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতাকে নসাৎ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পথপরিক্রমার মধ্য দিয়ে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করতে পারছি।’
আমু বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, অপূর্ণ সেই স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের ২৩ বছরে সাড়ে ১৩ বছর কারা নির্যাতন ভোগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুই দুই বার ফাঁসির মঞ্চের আসামি হয়ে বাংলার মানুষের জীবনের জয়গান গেয়ে বাংলার মুক্তিপাগল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তি এনেছিলেন তিনি। তারই আহ্বান ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-এ সাড়া দিয়ে ৩০ লাখ লোক আত্মাহুতি দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছে।”
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার উষালগ্নে বঙ্গবন্ধু যখন এই দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেওয়ার জন্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই মুহূর্তে তাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই দেশে দল ভাঙার রাজনীতি জিয়াউর রহমান শুরু করে। জিয়া এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যা করে, দেশীয় চার মূলনীতি হত্যা করে। সেই মুহূর্তে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে এসে হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে আমরা যখন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করছি, বারবার তার প্রাণনাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতোই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে শেখ হাসিনা এগিয়ে গিয়েছেন। মহান রাব্বুলামিন তাকে বারবার রক্ষা করেছে। ১৯ বার মৃত্যুর মুখে পড়ে শেখ হাসিনা আজ জীবিত আছেন বলেই বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ, বাঙালিকে পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করবে।’
আমির হোসেন আমু বলেন, ‘শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন। তার এই অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে, এই রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। সেটা বাঙালি জাতির জন্য একটি গর্বের ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালির ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। এখনো গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক শক্তি গণতন্ত্রকে নসাৎ করবার চেষ্টা করছে। আজকের দিনে সবাইকে নতুন করে শপথ নিতে হবে, সমস্ত অপশক্তির মোকাবিলা আমরা করব।’
শোভাযাত্রার উদ্বোধক আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
এ সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ ঢাকা মহামগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে আবু আহমেদ মান্নাফী, শেখ বজলুর রহমান, হুমায়ুন কবির, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, কাজী মোর্শেদ কামাল, হাবীব হাসান, মিরাজ হোসেন, আজিজুল হক রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম