বিজয় শোভাযাত্রায় সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:১৯
ঢাকা: পৃথিবীর কোনো শক্তি ষড়যন্ত্র করে বাংলার মাটিতে আরেকটি পঁচাত্তর আনতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মশাল জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তার নেতৃত্বেই আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব। সব জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে এই বাঙালি জাতি-মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষেরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতত্বে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ‘বিজয় শোভাযাত্রা’য় বাঙালির বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে সোনার বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নেতাকর্মীদের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান নেতারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন দলের উপদেষ্টাপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।
বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রাটি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, এলিফ্যাট রোড এবং মিরপুর রোড হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত বাসভবন ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বার ঐতিহাসিক ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ প্রাঙ্গণ এসে শেষ হয়।
কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযাগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেয়। বিজয় শোভাযাত্রাকে বর্ণাঢ্য, উৎসবমুখর করতে দলের নেতাকর্মীরা বাদ্য-বাজনা, ব্যান্ড পার্টির তালে তালে আনন্দমুখর পরিবেশে লাল-সবুজের ছোট ছোট পতাকা, ফেস্টুন ব্যানার হাতে অংশ নেয়। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগের কর্মীরা লাল-সবুজ রংয়ের শাড়ি পরে মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। জাতীয় পতাকা খচিত টি শার্ট, পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়াও অনেক কর্মীদের পরনে শোভা পায়। খোলা ট্রাক, পিকআপের মাইক লাগিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ, জয় বাংলা’র উজ্জীবনী বিভিন্ন দেশাত্মবোধক সঙ্গীত বাজাতে দেখা গেছে। ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি মৎস্য ভবনের দিকে দুইটি হাতিও শোভাবর্ধন করে শোভাযাত্রার।
শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে কর্মসূচি সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান প্রধান অতিথি ও অনুষ্ঠানের উদ্বোধক দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু।
আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক,আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের নেতাদের মধ্যে আবু আহমেদ মান্নাফী, শেখ বজলুর রহমান, হুমায়ুন কবির, হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, কাজী মোর্শেদ কামাল, হাবীব হাসান, মিরাজ হোসেন, আজিজুল হক রানা বক্তব্য রাখেন।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতার পর শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আল্লাহর রহমতে আওয়ামী লীগও আছে, বাংলাদেশ আছে মন্তব্য করে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭৫’র পরে সমস্ত হত্যা ক্যূ ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে ভেদ করে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্রাহ, বঙ্গবন্ধুর সচিত্র যে পথ; অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা,চিকিৎসা, বাসস্থানের গ্যারান্টি দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীসহ সমস্ত বাঙালিকে এটা বাস্তবায়িত করার জন্য আজকে তারা শপথ নেবে-এই হোক আজকের কথা।’
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আজকে আমাদের শপথ হবে উন্নয়নের এই ধারাকে আমরা অক্ষুণ্ন রাখব, বাংলাদেশকে যে উন্নয়নের মহাসড়কে সম্পৃক্ত করেছি তা আরও সুদৃঢ় করবো। আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই হবে আজকের শপথ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো শক্তি ষড়যন্ত্র করে আরেকটি পঁচাত্তর বাংলার মাটিতে আনতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মশাল জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তার নেতৃত্বেই আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে ৫০ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সকল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, পাকিস্তানি শোষণ-শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি এই বিজয় অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের দিনেও সকল জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে ছিন্নভিন্ন করে এই বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষেরা এগিয়ে যাবেই যাবে।’
আব্দুর রহমান বলেন, ‘আজকের এ সমাবেশ প্রমাণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সন্ত্রাসমুক্তি, জঙ্গিবাদমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ব, সেই দিনেই বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। আজকে এই হোক আমাদের প্রত্যয়, আজকের শপথ।’
২১ শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার জন্যে যারা গ্রেনেড হামলা করেছিল সেই গ্রেনেড হামলার নেপথ্য নায়ক তারেক জিয়াকে বাংলার মাটিতে ফেরত এনে, ওর বিচার এই বাংলার মাটিতে করারও দাবি করেন এই নেতা।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতির পিতার সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। ঠিক একইভাবে এখনো আমাদের এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ব্যাহাত ঘটানোর জন্য সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানসহ তারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, আমরা একাত্তরে যেভাবে সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম। আজকেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিযে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলা গড়ব-এটাই হবে আজকের প্রত্যয়।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘সব অপশক্তিকে রুখে দাঁড়িয়ে আমরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছি, এগিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ৫০বছরের দীপ্ত পথচলায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি, আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই স্বপ্ন পূরণের পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকের এই দিনের প্রত্যয়— সমস্ত অপশক্তি নিপাত যাক, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির চূড়ান্ত পতন হোক, সেই প্রত্যয় ব্যক্ত করি।’
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করে গিয়েছেন কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনিমার্ণ করে যেতে পারেননি। আমরা এই দিনে শপথ নেব— জাতির পিতার সুযোগ্য সন্তান বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে পরিগণিত করব।’
কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি, কোনো জঙ্গিবাদী শক্তি অথবা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি; যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, সেই অপশক্তি যেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কোনোভাবেই ভুলণ্ঠিত করতে না পারে। তাই আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে যে কোনো মূল্যে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। এই আমাদের প্রত্যয়, এই আমাদের লক্ষ্য, এই আমাদের শপথ।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মহা বিজয়ের মহানায়ক, আপনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা শপথ নিতে চাই, শেখ হাসিনার উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব, না হয় মরব—’ বলে অঙ্গীকার করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
সারাবাংলা/এনআর/একে