পাগলের সুখ মনে মনে
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৪৯
বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে তারা বোধহয় যখন-তখন ক্ষমতার মসনদে বসে পরবে। বা যে কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে যেকোনোভাবে। আর বর্তমান সরকার যখন-তখন ক্ষমতা থেকে পড়ে যাবে! ব্যাপারটা তাদের কাছে সেকেন্ডের ব্যাপার মনে হচ্ছে। শুধুমাত্র যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তাদের দণ্ডপ্রাপ্ত উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত সহায়-সম্পত্তি রক্ষা করা ও তাদের দণ্ড থেকে বাঁচানোর আন্দোলন আন্দোলন খেলা করে এবং মাঠে ময়দানে আবোল-তাবোল কথা বলে মনে হচ্ছে দৃশ্যত সময় পার করছে বিএনপি। আর খোয়াব দেখছে, কখন যেন হুট করেই কেউ ক্ষমতায় বসিয়ে দিল! তাই অবৈধ ক্ষমতা দখলদার, সামরিক জান্তা জিয়ার গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি এই স্বপ্নেই বিভোর হয়ে আছে। রাত পোহালেই যেন কোনো দেশ বা গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে দেবে।
শুরুটা হয়েছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুখঃজনক বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা দিয়ে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর দুবছর আগে ক্ষমতা হারানো জামাত-বিএনপি তথা খালেদা-নিজামীর জোট সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আরোহণ করে। তার পঞ্চাশ দিনের মাথায় এই বিডিআর বিদ্রোহের মতো একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা এবং একটি শৃঙ্খলবাহিনীতে এমন দুঃখজনক ও মর্মান্তিক ঘটনায় দেশবাসী যখন স্তম্ভিত ও শোকাগ্রস্থ। ঠিক সেই সময়ে নির্বাচনে পরাজিত ও ক্ষমতায় থাকতে নিজেদের দুঃশাসন ও অপকর্মের বিচারের ভয়ে ভীত বিএনপি এই ঘটনায় উল্লাস নৃত্য করে প্রথম গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর থেকে তারা দেশে বা বিদেশেও যদি কোনো ঘটনা ঘটে অথবা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো দেশের সরকারের পরিবর্তন হয় তাতেও উল্লাসিত হয়।
দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের বিচার, ভয়াবহ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার ও বিচারে তাদের দুর্নীতিগ্রস্থ শীর্ষ নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ইত্যাকার নানা বিষয়ে বিচলিত ও হতাশ বিএনপি ভোটের মাধ্যমে বার বার ক্ষমতায় যেতে ব্যার্থ হয়ে আবার তাদের পুরোনো খেলা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অবশ্য ক্ষমতা হারিয়ে এই দেড় দশকে তারা নানা ধরনের চক্রান্ত করে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশিদের কাছে ধরণা দিয়ে, দেশবিরোধী চিঠি লিখে, কোটি কোটি ডলার খরচ করে দেশি-বিদেশি লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারকে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাবখানা এমন যে, এসব করলে তাদের বিদেশি মুরুব্বিরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাতারাতি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেজন্য ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এলে তারা উল্লসিত হয়, আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসলে পুলকিত হয়, হিলারি ক্ষমতা পাবে বা পাকিস্তানে ইমরান খান বা কোন সামরিক জান্তা এমনকি আফগানিস্তানে বর্বর তালেবান ক্ষমতা দখল করলেও এরা পুলকিত হয়। যেন এই বুঝি তারাও ক্ষমতায় গেল। আর দেশের মধ্যে যেকোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলেই স্যুট-ছাফরি রেডি করে রাখেন! যেন ক্ষমতার ডাক এলো বলে। এ এক আশ্চর্য দিবাস্বপ্ন! মনে সুখ সুখ ভাব!
বিএনপির আন্দোলন করে বিজয়ী হওয়ার কোনো নজির নেই। তারা এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেয়নি। অন্যের আন্দোলন অনুসরণ করেছে মাত্র। জনগণের দাবি আদায়ে বাংলাদেশের সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং সফল হয়েছে। আন্দোলনেও যেমন আওয়ামী লীগ সফল, তেমনি বার বার সরকারে গিয়েও সফল। পক্ষান্তরে কি বিরোধীদল বা কি সরকারি দল- সবখানেই ব্যর্থ বিএনপি। ক্ষমতায় থাকতে তারা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে, হত্যা-নির্যাতন করে দেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। একইভাবে বিরোধীদলে থেকেও তারা জ্বালাও পোড়াও করে, পেট্রোল বোমা মেরে, আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে দেশের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। কিন্তু সফলতার মুখ দেখে নাই। কারণ, তারা জনগণের জন্য কোনো আন্দোলন করে না। বিএনপি আন্দোলন করে তাদের দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের দণ্ড ঠেকাতে, না হয় তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ বাঁচাতে। তাই এসব আন্দোলনে কোনো জনসম্পৃক্ততা থাকে না। তখন তারা বেছে নেয় ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কালো পথ। নিজেদের চরিত্রের কোনো সংশোধন তো করেই না উল্টো অন্যের ভুল ধরতে বা অন্যদের হেয় করতে উঠে-পড়ে লাগে।
কোনো মন্ত্রীর শিষ্টাচার বহির্ভূত কোনো কর্মকাণ্ড বা কোনো নেতা বা এমপির কোন ধরনের অন্যায় পেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ব্যবস্থা নিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছেন, তখনও বিএনপির পলাতক শীর্ষ নেতা বিদেশে বসে শিষ্টাচার বিবর্জিত ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। আর তার দেখাদেখি দেশে বাস করে বিএনপি নেতা আলাল, আমান, ইশরাক, দুদু, মিলন ও রুমিন ফারহানারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শিষ্টাচার বিবর্জিত অসভ্য ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে তো বিএনপি কোনো দলীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেই না, বরং তাদের এই নোংরা বক্তব্যের পক্ষে ছাফাই গাচ্ছে। ভাবটা এমন যে, বিএনপি এখনই ক্ষমতায় যাচ্ছে, এসব নোংরা কথা বললে সরকার কিছুই করতে পারবে না। যে কারণে তারা তাদের বক্তব্যে তাকগোল পাকিয়ে ফেলছে। তাই মির্জা ফখরুল তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ বানাচ্ছে আবার মির্জা আব্বাস বিএনপিকে বানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল। তারা বলছে ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেছে।’ আবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিষেধাগার করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। সরকারের উচিত হবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ক্ষমতায় যাওয়ার সুখ মনে মনে নিক অসুবিধে নাই। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে, এদেশেই বহাল তাবিয়াতে থাকবে- তা দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
ক্ষমতায় থাকতে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে হত্যা ষড়যন্ত্র, মানুষ খুন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, বিরোধীদলের এমপিদের হত্যা করা, তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের মত ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টাসহ নানা ধরনের কুটিল পথ অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়ে জনগণের ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে, তখনই তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কখনো তাদের প্রভু ট্রাস্টকে দিয়ে, বিদেশি মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, কখনো দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, কখনো র্যাবের বিরুদ্ধে বিদেশে নালিশ করে সরকারকে বিব্রত করতে চাচ্ছে। কার কোন দেশে যাওয়ার ভিসা বাতিল হলো, কাকে কোন দেশে যেতে দেবে না- তুচ্ছ এসব বিষয়ে তথ্য যাচাই না করেই বিএনপি নেতারা খুশিতে বাকবাকুম করে। আর এতে করে ওইসব দেশ যদি কোনো ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কোনো বিবৃতি প্রদান করে তখনই বিএনপির উল্লাস নৃত্য শুরু হয়ে যায়। এমনকি সরকার যদি তাদের নিজ দলের কোনো নেতা বা এমপি-মন্ত্রীকে তার কোনো অন্যায়ের জন্য ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রেও এই বিএনপি পুলকিত বোধ করে। মনে মনে ধরে নেয় এই বুঝি সরকার গেল। মনে মনে সুখ পায়। পাগলের সুখ যেমন মনে মনে, এদেরও সেই অবস্থা।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।
ই-মেইল:[email protected]
সারাবাংলা/পিটিএম