সমন্বিত স্যানিটেশনের আওতায় আসছে ১০ শহর
১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭
ঢাকা: দেশের ১০টি শহরকে সমন্বিত স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসছে সরকার। এজন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন (সমন্বিত কঠিন ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ঋণ সহায়তা থেকে ৪৭৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্যানিটেশন অবকাঠামোর পরিষেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্যানিটেশন কর্মীদের পেশাগত সুরক্ষা, জনগণের সম্পৃক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক ঝুঁকি নিরসনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দূষণরোধ ও জলবাহিত রোগের বিস্তার প্রতিহত করা। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ, উদ্ভাবনী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জলবায়ু ও দুর্যোগ-নিরোধক স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিষেবাগুলোর সার্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। উদ্যোগী ব্যবসায়িক মডেল প্রস্তুত করা, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সক্ষমতা বিকাশের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক স্যানিটেশন কর্মীদের জীবন ও জীবিকার সুযোগকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা এবং শহরব্যাপী সমন্বিত স্যানিটেশন কাঠামো ও এর নির্দেশিকা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৌরসভার বিভিন্ন স্তরের জবাবদিহিতা শক্তিশালী করা হবে।
সমন্বিত স্যানিটেশনের আওতায় আসছে যে ১০টি শহর- নরসিংদী, জামালপুর, শরীয়তপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট এবং পটুয়াখালী।
পরিকল্পনা মিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন হয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাবে মোট জনসংখ্যায় প্রায় ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ নগরে বসবাসকারী। এর মধ্যে প্রায় ৫৫ ভাগ জনগণ বস্তিতে বসবাস করছে।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থ করা বাংলাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা টেকসই করার ক্ষেত্রে পয়ঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসডিজি লক্ষ্য ৬ দশমিক ২ অর্জন করার জন্য নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন সুবিধা এবং পরিষেবাগুলোর কার্যক্ষম নিশ্চিত করা অপরিহার্য, যা কেবলমাত্র সম্পূর্ণ স্যানিটেশন পরিষেবার সঠিক পরিচালনার মাধ্যমেই সম্ভব। শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত বস্তি এবং অনানুষ্ঠানিক জনবসতিগুলোতে বসবাসরত মহিলা ও শিশুরা অনিরাপদ পানীয় জল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে, সরকার নগর স্যানিটেশনকে বিশেষ করে ফেকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্টকে (এফএসএম) অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসাবে গুরুত্ব দিয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় সরকার ২০১৩ সালে এফএসএম’র জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামো (আইআরএফ) অনুমোদন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আইআরএফ-এফএসএম দ্রুত কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন স্তরের স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা ও দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই নির্দেশনা মোতাবেক সিটিওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেনে (সিডব্লিউআইএস) আওতায় মানব বর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক পরিকল্পনা, উন্নয়ন, বাস্তবায়ন, অনুশীলন ও পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে বিএমজিএফ’র আর্থিক সহায়তায় সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে (ডিপিএইচ) একটি এফএসএম সাপোর্ট সেল গঠন করা হয়েছে।
সরকার দেশের ৫৩টি জেলা পর্যায়ের পৌরসভা এবং ৮টি সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্য এবং মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (টিএপিপি) নিয়েছিল। বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গ্যাগেজ ফাউন্ডেশন (বিএমজিএফ) এই টিপিপির জন্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। এই কারিগরি প্রকল্পের সমীক্ষার ফলাফল পরবর্তীতে কঠিন বর্জ্য এবং মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার বা উন্নয়ন অংশীদারদের বিনিয়োগের ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ২৩৪ জনমাস ডিজাইন ও সুপারভিশন পরামর্শক, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি, ৬৬ জনমাস ব্যক্তি পরামর্শক, ইন্টিগ্রেটেড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ১০টি কঠিন বর্জ্য পরিশোধন ও ব্যবস্থাপনা স্থাপনা নির্মাণ, ১০টি মানব বর্জ্য পরিশোধন ও ব্যবস্থাপনা স্থাপনা, ৭৭ হাজার ৭৭ টি স্ল্যাজ কনটেননমেন্টন স্থাপন, ১৯টি ভষ্মীকরণ যন্ত্র স্থাপন, ৩৮ একর ভূমি উন্নয়ন, ৩৭টি ট্রান্সফার স্টেশন, ৬৩টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন, ৫১টি ডি স্লাজিং ট্রাক, ২৮টি ড্রাম্প, ১১টি রোড সুইপিং ট্রাক, ১২টি ডিজেল জেনারেটর, ১৬টি এক্সাভেটর, বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম, ফার্নিচার ক্রয়, ৩৮৭টি হস্তচালিত ঠেলাগাড়ি, ৩৮৭টি রিক্সাভ্যান, ২৫৮টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট এবং ২৫৮টি কমিউনিটি বিন করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ১০টি অগ্রাধিকারভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন কার্যক্রম ব্যবস্থার উন্নয়নসহ স্যানিটেশন কভারেজ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি এসডিজির লক্ষ্যগুলো মোকাবিলার জন্য ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস