অস্বাভাবিক সরকার গড়তে চায় বিএনপি-জামায়াত: ১৪ দল
১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৫৩
ঢাকা: পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ‘অস্বাভাবিক সরকার’ গড়তে চায় বলে অভিযোগ করেছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলছেন, যেসব রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ জামায়াত, জঙ্গি-আলবদর-রাজাকার পাকিস্তানপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে, তাদেরকে বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে তাদের বিদায় করে দেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) স্বধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় ১৪ দলের নেতারা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি আজ খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়াকে ইস্যু বানিয়েছে। অথচ এই দুই বছরে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে একটি পোস্টারও করেনি। এটি তাদের ইস্যু নয়। তাদের মুরুব্বি দেশের ইশারায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে তাদের এই হাঁকডাক।
‘বিএনপি এতই আমোদ-প্রমোদ করছে যে আজ পর্যন্ত তাদের নিজেদের টাকায় বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার মতো উদ্যোগ নিতে পারেনি। অথচ তাকে বিদেশে নেওয়ার একটি বেআইনি প্রস্তাব নিয়ে তারা কথা বলছে। বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না,’— বলেন আমির হোসেন আমু।
ইস্যু নেই বলে বিএনপি-জামায়াত খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রাকে ইস্যু বানিয়ে মাঠ গরম করতে চায় মন্তব্য করে আমু বলেন, শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব দরবারের অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ শেখ হাসিনার কথার ব্যাপারে অন্য দেশের রাজনৈতিক নেতারা চিন্তা করে কথা বলেন। আজ যদি কেউ মনে করেন ঠুনকো প্রধানমন্ত্রী, ঠুনকো সরকার— সেটি ঠিক হবে না। এর প্রমাণ তারা পেয়েছে আরও প্রমাণ পাবে।
জাতীয় সমাজাতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের চেহারা পরিবর্তন করেনি। এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। তারা জঙ্গিবাদের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সরকার গঠনের পাঁয়তারা করছে। তারা রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর হামলার কথা বলে, চার মূলনীতি উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বলে। এই ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা বলে— এই জঙ্গি জামায়াতি চক্র মাফও চায়নি, বদলায়ওনি। উপরন্তু রাষ্ট্রের ওপর হামলার ছক আঁকছে। রাজাকার সাম্প্রদায়িক সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষফোঁড়া ধর্ম ব্যবসায়ীরাই রাজনৈতিক বেইমান। তাদের বাংলাদেশের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। তারা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কানেকশন রেখে সব ধরনের উসকানি ও ষড়যন্ত্র করছে। যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ওপর হামলা-আক্রমণ পরিচালনা করছে, ইসলাম বিক্রি করে ধর্মীয় উসকানি দিচ্ছে, তাদের কঠোরভাবে দমনই শুধু না, নিষিদ্ধ করতে হবে এবং রাজনীতি থেকে চিরবিদায় দিতে হবে।
নির্বাচন বর্জন ও অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব দিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে ইনু বলেন, আরেকটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার বীজ প্রকাশ্যে বিএনপি কয়েকদিন আগে বপন করেছে। একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গড়ার প্রস্তাব দিয়ে এবং নির্বাচন বর্জন করার প্রস্তাব দিয়ে এবং শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়ে তারা এই বীজ বপন করেছে। বিএনপির এই প্রস্তাব কার্যত সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীল করার প্রস্তাব।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতার জন্য নয়, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। যখন বিজয়ের ৫০ বছরে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি, তখন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। এগুলো প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শাণিত করতে হবে। কথার ফুলঝুরি নয়, রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে আলোচনা সভায় মত দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পঞ্চাশের দশকে দেশে যখন খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়, তখন জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি। অথচ এখন ১৭ কোটি মানুষ, মাথাপিছু জমির পরিমাণও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। কৃষিজমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমেছে। তারপরও এখন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন দেশের জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। অথচ স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বিএনপি-জামায়াত কোনো উন্নয়ন-অগ্রগতিই দেখতে পায় না।
কনিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, সমাজ থেকে বৈষম্য ও দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে এ দেশের মাটি থেকে উৎখাত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বলেন, আজকে এই যে আমরা কথা বলছি, নেতা হয়েছি, বঙ্গবন্ধু না থাকলে কিছুই হতো না। ১৫ আগস্টে যারা জন্মদিন পালন করে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। বিএনপি যতই নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের বলুক, আসলে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়, তাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। ওয়াজ মাহফিলেল নামে যারা স্বাধীনতা ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, এদের ওয়াজগুলো বন্ধ করা দিতে হবে।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ, বিএসডি) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জনবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার, গণতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। সভায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর