অব্যাহতি নিলেন ২ কর্মকর্তা, হাসপাতালে বন্ধ করোনা পরীক্ষা

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষার কিটে ‘নয়ছয়ে’র অভিযোগ ওঠে। এতে অভিযুক্ত হয়েছিলেন দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অব্যহতি দেওয়ার আগেই নিজ থেকে অব্যহতি নিয়েছেন তারা। ফলে এই ল্যাবে এখন করোনার নমুনা পরীক্ষায় বন্ধ হয়ে গেছে।

যদিও করোনা কিটের নয়ছয় নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছিলো। গঠিত কমিটি তদন্ত করে অভিযুক্তদের কিট গায়েবের অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলেও দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলো। কিন্তু এর আগেই তারা অব্যহতি নিয়ে নিলেন। এই দুই কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর থেকে মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।

এ দুই কর্মকর্তা হলেন- এস এম হাসান এ লতিফ ও হামিদ আহমেদ। তারা মূলত বিভাগীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব চালু করার জন্য ২০২০ সালের মার্চে তাদের ডিএনএ ল্যাব থেকে আনা হয়। গত ২২ মাস তারা কোনোরকম অতিরিক্ত সম্মানী ছাড়াই সপ্তাহের সাত দিনই ল্যাবে কাজ করছিলেন।

অব্যহতি নিয়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, ‘ওনাদের নিজেদের ডিএনএ ল্যাবেই নাকি এখন কাজ বেড়ে গেছে। তাই অব্যাহতি নিয়েছেন। তাও আমি অনুরোধ করে কয়েক দিন কাজ করিয়েছি। এখন তারা না থাকার কারণে ল্যাব বন্ধ। ল্যাব চালু থাকলে আমরা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নমুনা এখানেই পরীক্ষা করাতে পারতাম। এখন নমুনা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে যেতে হচ্ছে।’

অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলেও অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার ক্ষোভ থেকেই তাঁরা অব্যাহতি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে এসএম হাসান বলেন, ‘আসলে ক্ষোভটোভ কিছু না। আমাদের ডিএনএ ল্যাবেই এখন কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। তাই চলে এসেছি। আমরা এখান থেকেই বেতন পাই, মূল কাজটা তো এখানেই। ক্রান্তিকালে আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কোনো রকম সম্মানী ছাড়াই কাজ করেছি। এ কথা তো কেউ বলে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবের টেকনোলজিস্টরা সম্প্রতি এই দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্ধেক করোনা কিট ব্যবহার করে পরীক্ষার পর বাকি অর্ধেক সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। কিন্তু কাগজপত্রে ৪৯ হাজার ৪০০ কিটের মধ্যে প্রায় সবই ব্যবহার করার প্রমাণ রাখা হয়। অভিযোগকারীদের দাবি, অন্তত ২ হাজার কিট গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান শাহ আলমকে। কমিটি কিট গায়েবের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তবে শুধু অভিযোগকারীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কমিটি দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে।

গত ২১ নভেম্বর হাসপাতাল পরিচালকের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। গত ২২ নভেম্বর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম হাসান লতিফ বলেছিলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। প্রমাণ না হলেও শুধু সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশের বিষয়টি বেদনার।

তবে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়নি। এরপর গত ১১ নভেম্বর দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন। এরপর হাসপাতাল পরিচালক অনুরোধ করে গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের ল্যাবে কাজ করান। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তারা আর ল্যাবে কাজ করেননি। সেদিনের পর হাসপাতালের ল্যাবে কোনো নমুনাও পরীক্ষা হয়নি।

পরিচালক বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককেও লিখেছি। অব্যাহতি নেওয়া দুই জনের মতো দক্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমাদের দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তাহলে আমরা ল্যাব চালাতে পারব। তা না হলে পারব না। কারণ, আমাদের কোনো জনবল নেই। দেশের কোনো হাসপাতালেই এ ধরনের জনবল নেই। তাই পিসিআর ল্যাবও নেই। শুধু আমাদের এখানেই পিসিআর ল্যাব আছে।’

সারাবাংলা/এমও

করোনা পরীক্ষা কর্মকর্তা নমুনা পরীক্ষা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল