ব্যয় বাড়ছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের
২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:২৮
ঢাকা: ব্যয় বাড়ছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অবশিষ্ট পরিবারের পুনর্বাসন, ব্যারাক মেরামতসহ নানা কারণে এই ব্যয় বাড়ছে। এজন্য প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। অনুমোদিত প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধীত) অনুসারে ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৪ হাজার ৪৫০ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ১৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ২০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে তৃতীয় সংশোধনীতে এসে ব্যয় কিছুটা কমিয়ে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা করা হয়। এবার চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাবে ৬৩১ কোটি ১৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ১৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
প্রকল্পের সংশোধনীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, পরিবারকে জমি, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ও চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এছাড়া পুনর্বাসিতদের ঋণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য ১৯৯৭ সাল হতে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র পরিবার পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প ২০১০ সালে নেওয়া হয়।
আশ্রয়ণ-২ মূল প্রকল্পটি ৭০০টি আশ্রয়ণ গ্রাম স্থাপনের মাধ্যমে ৫০ হাজার পরিবার পুনর্বাসন করার জন্য সরকারি অর্থায়নে মোট ১ হাজার ১৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সাল হতে ২০১৪ সালে বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে শহর এলাকায় টিনের ঘরের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য সুবিধাসহ ৫০ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় ১ হাজার ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং মেয়াদ ৩ বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রথম সংশোধন করা হয়। এ সময় সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) মোট ২ হাজার ২০৪ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কক্সবাজারের খুশুরকুল মৌজায় পুর্নবাসন কাজ এ প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। এ সময় ২০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে পৃথকভাবে একটি প্রকল্প তৈরি করে খুশুরকুলে বিশেষ আশ্রায়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ সব কারণে আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে তৃতীয়বার সংশোধন করা হয় প্রকল্পটির।
বর্তমানে সরকার ঘোষিত সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মোট ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য ব্যয় ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং মেয়াদ ২ বছর বৃদ্ধি করে মোট ৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন পায়। এরপর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা- ২০২০ বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী একক গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণি এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন ‘খ’ শ্রেণিসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ২ লাখ ১৩ হাজার ২২৭টি পরিবারের পুনর্বাসন সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট পরিবার পুনর্বাসন এবং ব্যারাক মেরামতসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি মোট ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য চতুর্থ সংশোধন প্রস্তাব করা হলে প্রস্তাবিত আরডিপিপির ওপর চলতি বছরের ১২ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভায় প্রকল্পটির অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর একক গৃহের আংশিক সংশোধিত ডিজাইন অনুমোদন এবং প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেন। এ জন্য প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১০ সালের জুলাই হতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ এবং প্রতি ঘরের একক মূল্য ২ লাখ টাকার পরিবর্তে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ পর্যায়ে প্রাক্কলিত ব্যয় ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা হতে ১ হাজার ২২৩ কোটি ১ লাখ টাকা কমিয়ে ১১ হাজার ১৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় পূর্ণ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে, ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় পরিবার পুনর্বাসন, ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমিপাকা ব্যারাক, ৬০টি বহুতল ভবন, ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও স্লোপ প্রোটেশশন, সকল প্রকল্প গ্রামে অগভীর ও গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সকল প্রকল্প গ্রামে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস পরিকল্পনা কমিশনের হয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ দেওয়া নীতিমালা-২০২০ অনুসারে ভূমিহীন ও গৃহহীন ‘ক’ শ্রেণি এবং জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এরকম ‘খ’ শ্রেণির পরিবারসহ মোট ২ লাখ ৫০ হাজার পরিবার পুর্নবাসন এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। তাই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস