প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থের অবস্থা খতিয়ে দেখতে বুধবার বৈঠক শুরু
২১ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:২১
ঢাকা: উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের অবস্থা খতিয়ে দেখে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এর উপর ভিত্তি করেই সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য বুধবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনের সিরিজ বৈঠক। বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেবেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডির সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন। খবর ইআরডি সূত্রের।
সূত্র জানায়, ‘করোনা মহামারির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরাজ করছে ধীরগতি। চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে এসে বৈদেশিক অর্থ কাটছাটের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সিরিজ বৈঠকের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে নতুন বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে। এর আগে, গত ১১ অক্টোবর বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এমন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং সিনিয়র সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রয়েজনীয় তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি তৈরির জন্য সব চলমান এবং অনুমোদিত নতুন প্রকল্পের বৈদেশিক সহায়তা অংশের প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় বা বাস্তবায়ন অগ্রগতির তথ্য চাওয়া হয়।
ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক। সেগুলো হলো- বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, সংসদবিষয়ক সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে নয়টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক। সেগুলো হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ।
২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক। সেগুলো হলো- সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়,পল্লী উনন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এদিন বৈঠক হবে।
শেষ দিন ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক। সেগুলো হলো- স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এবং অর্থ বিভাগ। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, আইএমইডি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুদক, জননিরাপত্তা বিভাগ এবং সুরক্ষা সেবা বিভা।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ এডিপি সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রথমে বৈদেশিক অংশের হিসাব নির্ধারণ করে ইআরডি। আর সরকারি অংশের বিষয়ে নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশন। ইআরডি আগেভাগেই কাজ শুরু করে থাকে। সেটিই করছে তারা।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে অনেক প্রকল্পের পরামর্শক চলে গেছেন। এখনো তারা ফিরে আসেননি। অথবা আসলেও কেবল কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া যন্ত্রপাতি ক্রয়সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোতে টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের বিষয়গুলো আটকে ছিল। এরকম নানা কারণে বৈদেশিক অর্থ ব্যবহার কম হচ্ছে। তাই কিছু অর্থ হয়তো কাটছাট হতে পারে। কিন্তু কত হতে পারে সেটি এখন বলা সম্ভব নয়।’
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর মোট এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি, বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা এবং স্বায়স্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু গত চার মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো খরচ করতে পেরেছে ৩০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা, বা ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ২০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের চার মাসে ব্যয় হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম