ব্যয় বাড়ছে বিটিভির অটোমেশন প্রকল্পে
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৬
ঢাকা: ব্যয় বাড়ছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) অটোমেশন প্রকল্পে। একইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে ১ বছর ৬ মাস। এজন্য বিটিভির কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে এখন করা হয়েছে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৬৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, দর্শকদের আকাঙ্খা অনুযায়ী আইটিভিত্তিক অটোমেটেড পদ্ধতির যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করে বিটিভি, বিটিভি ওয়ার্ল্ড, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ও সংবাদ পরিবেশন করা। ফুল হাই ডিফিনিন্যাশন (এইচডি) সম্প্রচার প্রবর্তন করা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য ৩টি স্টুডিওতে যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নির্মাণ ও সম্প্রচারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভুমিকা পালন। বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত বিদ্যমান সিস্টেমের যন্ত্রপাতিগুলো ১৯৯৮ সালে স্থাপন করা হয়েছিল। যন্ত্রপাতিগুলো প্রায় ২৩ বছর ব্যবহারের ফলে কার্যক্ষমতা কমে গেছে। পুরাতন প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির স্থলে যুগের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিক ডিজিটাল ও অটোমেটেড পদ্ধতির যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করে কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও ডিজিটালাইজড করার জন্য এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিটিভির কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং একই সঙ্গে বিটিভির ৪টি চ্যানেল সম্প্রচারিত হবে, যাতে দর্শক বিটিভির অনুষ্ঠান ফুল হাই ডিফিনিন্যাশন (এইচডি) ফরমেট দেখতে পাবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে—
প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ও প্রাক্কলিত বৃদ্ধি: মূল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়ন ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্নের জন্য প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
বিটিভির কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার অটোমেটেড যন্ত্রপাতির জন্য প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিও ব্যয় বৃদ্ধি: প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি খাতে প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৬১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এই প্রাক্কলিত ব্যয় অপর্যাপ্ত হওয়ায় তা দিয়ে সরঞ্জামাদি ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে এ খাতের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে ৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
অনাবাসিক ভবন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি: মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) নিউজ স্টুডিও এবং স্টুডিও পিসিআর মেরামত, অ্যাশুসটিক, ফলস সিলিং, রেইজ ফ্লোর, নিউজের জন্য সেন্ট্রাল এপারেটাস রুমের কাজটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নিউজ স্টুডিওর নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করার আগে পূর্ত ও ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যান্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধি: আমদানিযোগ্য যন্ত্রপাতির আমদানির শুল্ক ও ভ্যাট, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামাদি, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, গাড়ির গ্যাস ও জ্বালানি, যন্ত্রাংশ মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, আসবাবপত্র ভ্রমণ ইত্যাদি খাতে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিটিভি একটি পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টার। বিটিভি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জাতীয় চেতনা দৃঢ করা এবং জনগণের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ধারণা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। এছাড়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পরিবার কল্যাণ, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য রক্ষা, নারী ও শিশু কল্যাণের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং শিক্ষা ও তথ্য বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিটিভি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ১৬টি সম্প্রচার স্টেশন ও স্যাটেলাইট সম্প্রচারের মাধ্যমে বিটিভি শক্তিশালী এবং কার্যকর গণমাধ্যমে পরিণত হয়েছে। ঢাকা টিভি স্টেশন হচ্ছে মূল কেন্দ্র, এই কেন্দ্র থেকে অধিকাংশ অনুষ্ঠান নির্মিত হয়। বিটিভির কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো ১৯৯৮ সালে স্থাপন করা হয়েছে।
বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সহায়তায় ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার প্রবর্তনের জন্য জাতীয় রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। জাতীয় রোডম্যাপ এবং আইটিইউ এর গাইডলাইন অনুযায়ী বিটিভি ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন সিস্টেমে রূপান্তর হবে।
সারাবাংলা/জেজে/এনএস