বৃহস্পতিবার কাউন্সিল, জমিয়তের নেতৃত্বে আসছেন কারা?
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:৩৯
ঢাকা: সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের (একাংশ) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘মজলিসে আমেলার’ বৈঠক বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে। আর বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দলটির জাতীয় কাউন্সিল।
সব কিছু ঠিক থাকলে টানা দুই দিনের এই সাংগঠনিক কর্মযজ্ঞের ভেতর দিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত হবে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের স্থলে দলটি পাবে নির্বাচিত সভাপতি ও নির্বাচত মহাসচিবসহ পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি।
দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৃত অর্থে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম গঠিত হয়েছিল উলামায়ে হিন্দকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে। শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের প্রশ্নে শায়খুল হাদিস আল্লামা শিব্বির আহমদ উসমানীর নেতৃত্বে ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ ও শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানীর নেতৃত্বে ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’- এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
বাংলাদেশ হওয়ার পর ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম’ হয়ে যায় ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’। এরপর অনেক উত্থান-পতন এবং ভাঙা-গড়া হয়েছে জমিয়তে। সর্বশেষ ভাঙন ধরে প্রয়াত মুফতি ওয়াক্কাস ও প্রয়াত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীর মধ্যমে। আজকের মজলিসে আমেলার বৈঠক এবং আগামীকালের কাউন্সিল মূলত প্রয়াত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী গ্রুপের।
গত বছর ৮ এপ্রিল এই গ্রুপের সভাপতি শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আব্দুল মোমিনের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা জিয়াউদ্দীন আহমেদ। অপরদিকে গত বছর ১৩ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে দলটির মহাসচিব নূর হুসাইন কাসেমীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। এ বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতকাণ্ডের পর তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন বাহাউদ্দীন জাকারিয়া। এই বাহাউদ্দীন জাকারিয়াই গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী কারামুক্ত হলে বাহাউদ্দীন জাকারিয়া ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে যান।
দলীয় সূত্রমতে, জমিয়তের সভাপতি শায়খে ইমামবাড়ি আল্লামা আব্দুল মোমিনের মৃত্যুর পর ‘আঙ্গুরার নাযিম সাহেব’ নামে খ্যাত মাওলানা জিয়াউদ্দীন আহমেদকে যখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়, তখন জমিয়তের অনেকেই মনে করেছিলেন এবার তিনি রাজধানীমুখী হবেন। কিন্তু রাজধানী তো দূরের কথা জেলা শহর সিলেটেও তেমন আসেন না জিয়াউদ্দীন আহমেদ। তার সঙ্গে দেখা করতে হলে যেতে হয় সিলেট শহর থেকে বেশ দূরে বিয়ানীবাজারের আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরে।
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিয়াউদ্দীন আহমেদের এই ‘অন্তর্মুখী’ অবস্থানের কারণে জমিয়তের কর্মীরা খুবই হতাশ। সে কারণে জমিয়তের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে তাকে আর দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং জমিয়তের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে প্রয়াত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীর আস্থাভাজন শায়খুলহাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক এগিয়ে রয়েছেন।
কেউ কেউ আবার আব্দুর রব ইউসুফীকে জমিয়তের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে দেখছেন। অবশ্য তাকে নিয়ে জমিয়তের মূল ধারার নেতাদের আপত্তি আছে। তাদের যুক্তি হলো- আব্দুর রব ইউসুফী সরাসরি খেলাফত মজলিসের মহাসচিব পদ থেকে এসে জমিয়তের নেতা হয়েছেন। সে কারণে জমিয়তের বড় অংশটি চায় আব্দুর রব ইউসুফী নন, শায়খুল হাদিস ওবায়দুল্লাহ ফারূক দলটির পরবর্তী সভাপতি হোক। কারণ, বাবার সময় থেকেই পারিবারিকভাবে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতির সঙ্গি যুক্ত। অবশ্য শেষ পর্যন্ত বিয়ানীবাজার গ্রুপের দাপটে মাওলানা জিয়াউদ্দীন আহমেদও থেকে যেতে পারেন জমিয়তের সভাপতি পদে।
দলীয় সূত্রমতে, মহাসচিব হিসেবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীই এগিয়ে রয়েছেন। দলের তরুণ অংশটি তাকেই মহাসচিব হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু হেফাজতকাণ্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে পড়ায় তার জন্য পদটি কঠিন হয়ে গেছে। বরং মুক্তিযোদ্ধা আলেম প্রয়াত মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমীর ছেলে মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়াকেই মহাসচিব দেখা যেতে পারে। কেউ কেউ মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরীর নামও বলছেন। তবে সব কিছুর পর সরকারের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিকে কেউ উড়িয়ে দিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সভাপতি ও মহাসচিব পদ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত হয়ে থাকে। এখানে কারও চাওয়া, না চাওয়ার বিষয় গুরুত্ব পায় না।’
সভাপতি ও মহাসচিব পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৬৫ সদস্য বিশিষ্ট মজলিসে আমেলার বৈঠকে ৭/৯ জনের একটি প্যানেল তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই প্যানেলই সভাপতি ও মহাসচিব পদে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করে। ওই নাম জাতীয় কাউন্সিলে উত্থাপন করা হয়। সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচিত হন। কেউ নিজে থেকে এই পদে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন না।’
সারাবাংলা/এজেড/এএম