৬ লাখ টাকার লোভে ব্যবসায়ী রমিজকে হত্যা, আড়াই মাসে রহস্য উদঘাটন
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৩৮
ঢাকা: ৩ অক্টোবর। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার কাটবাড়িয়া ডাউকিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশ থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় পাওয়া যায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সঙ্গে কাগজপত্র থেকে তার নাম-পরিচয় জানা গেলেও কীভাবে এই পরিণতির শিকার হলেন, সে বিষয়ে কিছুই জানা যাচ্ছিল না। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকেও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ‘ক্লুলেস মার্ডার’টির রহস্য উদঘাটন করতেও ঘাম ছুটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
আড়াই মাসের অনুসন্ধানে অবশেষে শিকার রমিজ উদ্দিন (৬৫) হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। এ ঘটনায় জড়িত জাকির হোসেনকে লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। এরই মধ্যে র্যাবের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাকির হত্যার কথা স্বীকারও করে নিয়েছে।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। র্যাব বলছে, ১৯৯৮ সাল থেকে আট বছর মালয়েশিয়ায় ছিলেন নরসিংদীর মনোহরদী থানার মান্দারটেক গ্রামের রমিজ উদ্দিন (৬৫)। ২০০৬ সাল দেশে ফেরার পর গরু বেচাকেনার ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে বড় আকারে খামার স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
রমিজ উদ্দিনের সেই পরিকল্পনা জানতে পারেন মনোহরদী উপজেলার একটি গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন জাকির। তিনি রমিজ উদ্দিনকে জানান, নিজের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী এলাকায় সস্তায় গরু কিনতে পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তিনি রমিজকে সেখানে নিয়েও গিয়েছিলেন। তাতে রমিজ আশ্বস্ত হলে ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা তোলেন রমিজ। ২ অক্টোবর জাকিরের সঙ্গে তিনি প্রথমে মনোহরদী থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী এবং সেখান থেকে বড়পুল যান।
তবে জাকিরের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। রমিজের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা লুট করতে তিনি রিকশায় করে তাকে কিশোরগঞ্জ সদরের ডাউকিয়া মসজিদ এলাকায় নিয়ে যান। তিনি রমিজকে জানান, সেখানেই গাড়িতে করে গরু আসবে। পরে রাত দেড়টার দিকে রমিজকে কৌশলে মসজিদের দক্ষিণ পাশে কলা বাগানে নিয়ে যান। এরপর সঙ্গে থাকা হাতুড়ি দিয়ে পেছন থেকে রমিজকে আঘাত করেন জাকির। আঘাতে রমিজ মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার কপালে, মুখে ও মাথার বিভিন্ন স্থানে আরও আঘাত করেন। আঘাতে রমিজ মারা গেছেন ভেবে তাকে সেখানে ফেলে রেখে জাকির পালিয়ে যান।
খন্দকার আল মঈন ব্রিফিংয়ে বলেন, মূলত দুই মাস আগেই রমিজকে হত্যা করে টাকা-পয়সা লুটের পরিকল্পনা করেন জাকির। হত্যার উদ্দেশ্যেই তিনি ২ অক্টোবরের আগেই হাতুড়িটি কেনেন এবং রমিজকে নিয়ে রওনা দেওয়ার সময়ও সেটি সঙ্গে রাখেন। রমিজের কাছ থেকে লুট করা ছয় লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ টাকা এরই মধ্যে তিনি খরচও করে ফেলেছেন। বাকি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রেখেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানিয়েছেন, রমিজকে হত্যা করার পর তিনি মনোহরদীর বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে ফজরের আজান দেন, নামাজ পড়েন। এরপর মক্তবের ২০ জন ছাত্রকে পড়ান। তার ধারণা ছিল, রমিজ উদ্দিনের মৃত্যুর কথা কেউ জানতে পারবে না। কিন্তু ৩ অক্টোবর সকালেই বিষয়টি জানাজানি হলে জাকির মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। নরসিংদীর মাধবদী, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয় ও সদর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ফের ময়মনসিংহে আত্মগোপনে থাকেন। পরে ঢাকায় এসে সেখান থেকে আবার লক্ষ্মীপুরের রামগতির একটি মসজিদে চিল্লার নাম করে আত্মগোপন করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের ওই মসজিদ থেকেই জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান র্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর