Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে ৩৭ নাগরিকের বিবৃতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:২৯

ঢাকা: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপের সাফল্য কামনা করে দেশের বিশিষ্ট ৩৭ জন নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী ও জরুরি বলে আমরা মনে করি।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করছি যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বেশকিছু মাপকাঠিতে দেশের প্রশংসনীয় সাফল্য এসেছে। তবে মুদ্রার অন্য পিঠ অর্থাৎ নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সমপ্রয়োগ, বাকস্বাধীনতা, সভা-সমিতির অধিকার, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতন এবং আনুষঙ্গিক অনেক মাপকাঠিতে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি। বৈষম্যের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানের ক্রমাবনতি এখন অনস্বীকার্য। এসব ছাড়িয়ে আমাদের উদ্বেগের আরেকটি বড় কারণ হলো আমাদের রাজনীতিতে পরমত সহিষ্ণুতার অবনতি। তিন দশক আগের, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রণীত তিন রাজনৈতিক জোটের রূপরেখায় যে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে আমরা ক্রমাগতভাবে পেছনে হেঁটেছি।

আজকের ক্ষীণ গণতন্ত্রের বাংলাদেশে এখন আবার নতুন করে গণতন্ত্র চর্চা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহিতা, আইনের সম ও ন্যায্য প্রয়োগ এবং আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সর্বময় ও বণ্টন ব্যবস্থাকে সাম্যমূলক করে তোলার জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ঐক্যমতের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আলাপ-আলোচনা করবেন— এমন প্রত্যাশার কথা তারা তুলে ধরেন বিবৃতিতে।

বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, আমরা এ-ও আশা করি— এই আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের ব্যাপারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি খসড়া প্রস্তাবনা প্রণীত হবে। বলাবাহুল্য, এই প্রস্তাবনায় বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের রূপকল্পও স্থান পাবে। আমাদের প্রত্যাশা, সেই সঙ্গে মানবাধিকার সংক্রান্ত আমাদের ব্যাপক ও প্রকট বিচ্যুতি নিরসনের নির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলোও রচিত হবে। আমরা আরও আশা করি, দলগুলোর মধ্যে ‘তিন জোটের রূপরেখার’ আদলে একটি ঐকমত্য তৈরি হবে। একইসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে গণমাধ্যম ও নাগরিক সংগঠনগুলোকেও যুক্ত করার জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

বিৃবতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৫) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মন্ত্রিপরিষদের বিবেচনার জন্য পাঠাবেন বলেও আমরা আশা করছি। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে আমরা আবারও সাধুবাদ জানাচ্ছি এবং সাফল্য কামনা করছি।

বিবৃতিতে যারা সই করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, মানবাধিকারকর্মী ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, ফেমা সভাপতি মুনিরা খান, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা।

বিবৃতিতে আরও সই করেছেন— সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্রশিল্পী ড. শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক স্বপন আদনান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, মানবাধিকারকর্মী ড. ফস্টিনা পেরেরা এবং মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ইসি পুনর্গঠন নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির সংলাপ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর