Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাইক্কা বিলে আসছে অতিথি পাখির দল

হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৩০

বাইক্কা বিলে অতিথি পাখির ঝাঁক, ছবি: সারাবাংলা

মৌলভীবাজার: প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখির দল। প্রতিদিনই দল বেঁধে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শীত প্রধান অঞ্চল থেকে এখানে আসছে এসব পাখি। আর পাখিদের কিচির মিচির ডাক আর জলকেলিতে মুখরিত হচ্ছে বাইক্কা বিলের মৎস্য অভয়াশ্রমটি। এটি মূলত দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন কেন্দ্র এবং সরকার ঘোষিত মৎস্য সম্পদ প্রজননের নিরাপদ স্থান। ১০০ হেক্টর আয়তনের এ বাইক্কা বিল দেশের একটি সংরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক জলাভূমি।

বিজ্ঞাপন

সিলেটের প্রসিদ্ধ এ জলাভূমিতে অতিথি পাখিদের ছুটাছুটি, পানিতে ভেসে বেড়ানো, দল বেঁধে ডাঙায় চুপচাপ বসে থাকা, আবার একসঙ্গে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মধুময় এ দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

ইতোমধ্যে বিলে বিভিন্ন জাতের কয়েকশ অতিথি পাখি এসেছে। এসব পাখিকে বরণ করেও নিয়েছে বাইক্কা বিলের জলজ প্রকৃতি। ফলে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এখন বাইক্কা বিল। এছাড়াও বেশকিছু বিপন্নপ্রায় ও বিরল দেশি পাখি সারা বছরই বাইক্কা বিলে অবস্থান করছে। ওরা নিরাপদ আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে এ বিল এবং বিলের পাড়ের হিজল-করচের বাগানকে।

এখন পর্যন্ত বাইক্কা বিলে অবস্থান নেওয়া অতিথি পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে কয়েক প্রজাতির সৈকতপাখি। এর মধ্যে খয়রা-কাস্তেচরা, বড় পানকৌড়ি, পাতি-কুট অন্যতম এবং হাঁসের মধ্যে গিয়িরা হাঁস ও তিলা হাঁস।

বাইক্কা বিলে গত কয়েক বছর থেকে শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে। ভাব জমিয়ে নেয় দেশীয় পাখিদের সঙ্গে। এখানে ক্রমশ সখ্যতা ও প্রেমের বন্ধনে স্থায়ীভাবে বসবাসও করছে প্রচুর পাখি। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় বাইক্কা বিলের রূপ। অপরূপ সৌন্দর্য্যর এই বিলে নভেম্বরের প্রথম থেকেই আসতে শুরু করে অতিথি পাখির ঝাঁক। প্রতিদিন বিচিত্র রঙের অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বিলটি।

বিল পাড়ের স্থানীয় বাসিন্ধারা জানান, অতিথি পাখির মধ্যে পানকৌড়ি, কাস্তেচড়া, কানিবক, ধুপনিবক, পাতিসরালী, রাজসরালী, পিন্টেল, সাদাবক, দলপিপি, ঈগল, বেগুনি কালেম, ছোট মাথা টিটি, ল্যাঞ্জা হাঁস, সরালি, মরচে রঙ ভুতিহাঁসসহ আরও অনেক নামের পাখি বিলে আসে। ইতোমধ্যে শত শত পাখি বরফের দেশ থেকে বাইক্কা বিলে এসেছে। পাখিদের আসা অব্যাহত থাকায় বোঝা যাচ্ছে, আরও পাখি এ বিলে আসবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমাদের দেশের আবাসিক পাখির মধ্যে বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালেমসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলে আসছে। পাখিগুলো বিলে ও বিলের চারপাশে কচুরিপানার মধ্যে অবস্থান করছে। ফলে বাইক্কা বিল এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ইনাম আল হক জানান, বাইক্কা বিলে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েক প্রজাতির পাখি চলেও এসেছে। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা মিলেছে তিলা হাঁস আর খয়রা-কাস্তেচরা। খয়রা-কাস্তেচরা এককালে বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর আগে টাংগুয়ার হাওরে প্রথম দেখা মিলেছিল। তারপর আস্তে আস্তে এদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলে শতাধিক খয়রা-কাস্তেচরার উপস্থিতি দেখা গেছে। তখন বাইক্কা বিল ছাড়া দেশের আর কোনো জলাভূমিতে এত বেশি পরিমাণে দেখা যায়নি। এবার ইতোমধ্যেই অর্ধশতাধিক খয়রা-কাস্তেচরা চলে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, গত মৌসুম থেকে এবার এদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বাইক্কা বিলে প্রতি বছর পৃথিবীর বরফজমা দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, হিমালয়সহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখিরা বেঁচে থাকার তাগিদে খাদ্যের সন্ধানে আর ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেতে এখানে আসে। মূলত এসব পাখিরা শীতের শুরু থেকে আসতে থাকে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

সারাবাংলা/এনএস

অতিথি পাখি বাইক্কা বিল মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর