Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কোরআনের শিক্ষা আর মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য আলাদা নয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫৩

সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা

ঢাকা: কোরআনের শিক্ষা আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত তিন মূল লক্ষ্য— ‘সাম্য, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায় বিচার’ আলাদা নয়। প্রবাসী সরকার গঠনের সময় কোরআন থেকে স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল কি না— সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও ঘটনাক্রমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে কোরআনের শিক্ষাটাকেই লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয়— স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশ ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভাগ এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিম, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ইমতিয়াজ আলম, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, দফতর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আবুল হাশেম খানসহ অন্যরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘স্বাধীনতার যে মূল লক্ষ্য— সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার— আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যদি এগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যে নীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটির চর্চা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপি— এটা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। এখানে আমরা কোনো ভাগাভাগি করি না। আমরা দেখি সবাই বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি নাগরিকের সমান স্বাধীনতা রয়েছে, অধিকার রয়েছে। এই অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আসছে।’

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করি, যেন সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, “১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ কলকতা মহানগরীতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নির্বাচিত জনপ্রনিধিরা বসে যে দলিলটি রচনা করেছিলেন এবং গ্রহণ করেছিলেন, তার নাম ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’। এর মাঝখানে লেখা আছে— ‘আমরা কেন স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করিলাম’। সব বয়ান দেওয়ার পর বলা আছে— ওপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জনগণের মধ্যে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলাম।”

‘এই তিনটি শব্দ কি পবিত্র কোরআনের শিক্ষা নয়? এটি পবিত্র কোরআনেরই শিক্ষা। এই মর্মে এটা ওখানে লেখা হয়েছে কি না, সন্দেহ। উনারা (মুজিব নগর সরকার) ভালো বিবেচনা করেই লিখেছেন। ঘটনাক্রমে তারা কোরআনের শিক্ষাটাই লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আর মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যের মধ্যে তফাৎ দেখি না। আমরা সবাই মিলে পবিত্র কোরআনের সেই শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে চাই,’— বলেন সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিম।

তিনি বলেন, ‘বিভাজনের রাজনীতি বাদ দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সমাজ গড়তে চাই, পরনিন্দার রাজনীতি বাদ দিয়ে, প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিয়ে আমরা সবাইকে নিয়ে এগোতে চাই।’

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আবুল হাশেম খান বলেন, ‘দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। প্রথম যুদ্ধেই আমার ভাই মারা গেলেন। আমি জীবীত রইলাম। আমার সঙ্গে ১৮৮ জন ছিল। এদের মধ্য থেকে প্রায় ৯০ জন মারা গেল। আমি বেঁচে গেছি আপনাদের দোয়ায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। তখন ভাবিনি এ রকম দুর্নীতি হবে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কলুষিত করা হবে, আমাদেরকে অপমানিত করা হবে। আমি ধিক্কার দিচ্ছি, এরা অমানুষ। তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে আমাদের নামের মধ্যে কলঙ্ক বসিয়ে দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা। এ সময় তাদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয় এবং দলীয় লোগো ও নাম সম্বলিত লাল-সবুজ মাফলার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠান শেষে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তাকে সহযোগিতা করেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের নেতারা।

সংবর্ধনা পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন— বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতিক, উমেশ ভৌমিক (হবিগঞ্জ), মো. আব্দুল ওয়াদুদ (ঢাকা), মো. আব্দুস সাত্তার সরকার (ঢাকা), মো. আবুল কাশেম (ঢাকা), নুরুল ইসলাম (ঢাকা), মো. আব্দুল গনী (ঢাকা), পি এম শাহজাহান সরকার (ঢাকা), ক্যাপ্টেন আবুল হাসেম খাঁন (ঢাকা), মো. আবুল কাশেম (গাজীপুর), মো. আমিন খাঁন (গাজীপুর), বজলুর রশিদ ভুঁইয়া (গাজীপুর), আব্দুল জলিল ভুঁইয়া (গাজীপুর), মো. মনির হোসেন সিকদার (গাজীপুর), মো. আব্দুল মালেক (গাজীপুর), মো. মোতালেব খাঁন (গাজীপুর), মো. আব্দুল গফুর (গাজীপুর), এমদাদুল হক খাঁন (গাজীপুর), মো. আবু সিদ্দিক (মুন্সীগঞ্জ), গোলাম মাওলা মাস্টার (মুন্সীগঞ্জ), তবারক ইসলাম (মুন্সীগঞ্জ), মো. খলিলুর রহমান (মুন্সীগঞ্জ), সৈয়দ শফিকুল আলম (মাদারীপুর), মো. সাহেব আলী হাওলাদার (মাদারীপুর), মো. আবুল কাশেম (মাদারীপুর), মো. মুনসুর আলী (খুলনা), শেখ মুজিবুর রহমানখুলনা, জি এম কিবরিয়া (খুলনা), মো আবুল হোসেন (হবিগঞ্জ), মো. সুরুজ আলী (হবিগঞ্জ), মো. ফারুক মিয়া (হবিগঞ্জ), মো. আলতাফ হোসেন (যশোর), মো. আবু নসর (যশোর)।

সংবর্ধনা পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আরও রয়েছেন— মো. মফিজুল আলম (যশোর), মো. আব্দুল হাই (ঝালকাঠি), মো. আইনুল হক (সিরাজগঞ্জ), মো. লুৎফুর রহমান (নড়াইল), মো. মাহবুবুর রহমান (নড়াইল), আব্দুস সালাম শেখ (নড়াইল), মো. এমদাদুল হক খাঁন (টাঙ্গাইল), মো. আনোয়ার হোসেন (নওগাঁ), মো. সাজজাদ হোসেন (নওগাঁ), মো. ইউসুফ (বরগুনা), মো. রইস উদ্দিন (ধামরাই), আব্দুর রহমান (ধামরাই), এইচ এম মহিউদ্দিন মন্ডল (কুড়িগ্রাম), এইচ এম সালাহ উদ্দিন (কুড়িগ্রাম), মো. সুফিয়ার খান (কুড়িগ্রাম), আবুল হোসেন (কুষ্টিয়া), আব্দুল হামিদ মাস্টার, আবু জাফর মো. সালেহ (পটুয়াখালী), মো. রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া (নোয়াখালী), মো. আমিন উল্লাহ (নোয়াখালী), মো. মহিউদ্দিন মিঞা (বরিশাল), মো. আব্দুল করিম হাওলাদার (বরিশাল), মো. রুহুল আমিন খাঁন (বরিশাল), শেখ মো. নেছার উদ্দিন (বরিশাল), মো. সুলতান মিয়াজি বরিশাল, আব্দুল খালেক রাঢ়ী (বরিশাল), মো. সেলিম বেপারী (বরিশাল), আব্দুল কাদের হাওলাদার (বরিশাল), মো. মাজিদুল ইসলাম ভুঁইয়া, মো. নুরুল ইসলাম, মো. কলিম উদ্দিন বিশ্বাস, মো. হাবিবুর রহমান, মো. খালেকুজ্জামান, মো. মোশারফ হোসেন, মো. আব্দুল হাই, মেহের উদ্দিন মিঁয়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গির ভুঁইয়া।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর